খেলাঘর পর্ব-১

0
6491

খেলাঘর পর্ব-১
লেখা- সুলতানা ইতি
ওহ হো মিথিলা খাবার টেবিলে ও বই নিয়ে এলি, প্লিজ খাওয়ার সময় অন্তত বইটা সাথে রাখিস না

মিথিলা- বাবা আর পঁচিশ দিন বাকি পরিক্ষার, বুঝো না কেনো সব পড়া বাকি রয়ে গেছে

কথা হচ্ছে মাসুম ফারুকি আর তার মেয়ে মিথিলার মাঝে,
এর মাঝে যোগ দিলো মিথিলার মা ফাতেমা বেগম
– তোমার মেয়ে সারা বছর গল্প উপন্যাস নিয়ে ব্যাস্ত থাকে এই পরিক্ষা আসলে হুস থাকে না বুঝেছো

মাসুম ফারুকি- আমার মিথিলা মা ই ভালো সব সময় কোন না কোন বই নিয়ে ব্যাস্ত থাকে এটা ভালো না, ভালো তো

ফাতেমা বেগম- তোমার মেয়েরা তোমার কাছে এমনি স্বর্গ, কই তোমার আদরের দুলালি ছোট নির্ঝরিণী এখনো নাস্তার টেবিলে আসেনি,কিছুক্ষন পর এসে বলবে আমার সময় নেই আমি যাই

মাসুম ফারুকি- তুমি তো শুধু আমার মেয়েদের কে ই দেখবা,তোমার রাজপুত্র আয়ান যে এখনো ঘুম থেকে উঠেনি সেটা কে দেখবে

মিথিলা- ওহ মা,বাবা তোমরা থামবে মনোযোগ দিয়ে পড়াটা দেখতে দাও তো

ফাতেমা বেগম-তোমার বিদুষীনি মেয়ের জন্য এখন কথা ও বলা যাবে না

এমন সময় আয়ানের এন্ট্রি
আয়ান- মা, বাবা প্রতিদিন নাস্তার টেবিলে তোমাদের ঝগড়া না হলে হয় না, না

ফাতেমা বেগম ছেলের প্লেটে নাস্তা তুলে দিতে দিতে বল্লো
তোর এক দার্শনিক বোন,আরেক গাইকা বোন তাদের নিয়ে কথা হচ্ছে দেখ আরেকজন খেতে বসেছে তবু ও তার সাথে বই

এবার মিথিলা বই বন্ধ করে দিলো
আর রাগি চোখে আয়ানের দিকে তাকিয়ে বল্লো
– প্রব্লেম কি তোদের এখন আমি পড়তে ও পারবো না তোদের জন্য

আয়ান – আমি আবার কি করলাম,যা বল্লো মা ই তো তোকে বল্লো,মাকে কিছু বলতে না ফেরে এখন আমাকে নিয়ে ছুটছে হুহ

আমি কিন্তু সবার কথা শুনেছি বিচার টা তা হলে আমিই করি, বলতে বলতে ডাইনিং এ আসলো নির্ঝরিণী

মিথিলা- তোকে এখানে দাদি সাঝতে হবে না, চুপ চাপ খেয়ে পড়তে বস,না পড়ে স্কুলে যেতে পারবি না

নির্ঝরিণী – তুই আর যা ই বলিস আপু আমি আর ভাই তো তোর মতো গ্রন্থকীট হতেই পারবো না

আয়ান- ঠিক বলেছিস নির্ঝরী দেখনা মাত্র এস এস সি পরিক্ষা দিবে, আর এই বয়সে চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা উঠেছে

আয়ানের কথার মাঝখানে নির্ঝরিণী বল্লো
-ঠিক বলেছিস ভাই আমি ভাবছি আপু বুড়ো কালে কি করবো বুড়োকালে তো মনে হয় চশমা দিয়ে ও দেখতে পাবে না তখন বলবে আল্লাহ হস্তে আমাকে বই টা পড়ে শুনান না,

নির্ঝরিণীর কথা শেষ হতে ই নাস্থার টেবিলে হাসির ধুম পড়ে গেছে

মিথিলা রাগ করে উঠে গেছে
রুমে এসে মিথিলা ধুম করে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বালিশে মুখগুজে কান্না শুরু করে দিলো, মিথিলার এই এক অভ্যাস কেউ তাকে নিয়ে হাসা হাসি করে সে সহ্য করতে পারে না, সে আপন হোক আর পর,

মিথিলা চলে যাবার পর খাবার টেবিল একেবারে নিরব হয়ে গেছে নিরাবতা ভাংলো আয়ান
– মা অনেক দিন হয়েছে বড় আপুদের বাসায় যাই না,,,

ফাতেমা বেগম- তো এখন পড়া ফাকি দেয়ার জন্য বড় বোনের বাসায় বেড়ানো ধান্ধা, স্কুল বন্ধ হোক তার পর না হয় জিমির বাড়ি তে যাওয়া যাবে, এখন জিমি আসছে কয়দিন পরে

মায়ের কথা শুনে আয়ান মুখ কালো করে ফেল্লো,(সারাদিন পড়া আর পড়া,ভাবলাম একটু কোথাও থেকে বেড়িয়ে আসি তা না)

নির্ঝরিণী – মা জিমি আপু আসছে? কবে কখন

মাসুম ফারুকি স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বল্লো
– কাল ই তো জিমির সাথে কথা বলেছি ও যে আসবে এটা তো বলেনি

ফাতেমা বেগম- আজ সকালেই ঠিক করেছে আসবে,
এভাবে টুকী টাকি আলোচনার মাঝে খাবার শেষ হয়

ফাতেমা বেগম খাবার নিয়ে মিথিলার রুমে যায়
গিয়ে দেখে মিথিলা বালিশে মুখ গুজে আছে
মেয়ে যে মুখ লুকিয়ে কাঁদছে এটা ফাতেমা বেগম দেখেই বুঝতে ফেরেছে,
বাকি দুই মেয়ের থেকে এই মেয়ে একদম আলাদা তার খুব ছাপা স্বভাবের, তার জগত ঝুড়ে নানারকম বই ছাড়া আর কিছুই নেই
ফাতেমা বেগম আলতো করে মেয়ের পিঠে হাত রাখে

মিথিলা হাতের ছোয়া পেয়েই বুঝেছে হাত টা কার
মিথিলা- মা আমি খাবো না, তুমি যাও তো, বালিশ থেকে মুখ না তুলেই বলেছে মিথিলা

ফাতেমা বেগম- ভাই বোনের সাথে রাগ করতে নেই মা খেয়ে নে,,ছোট ভাই বোন থাকলে এই রকম হয়

মিথিলা এবার বালিশ থেকে মুখ তুল্লো
মিথিলা- মা ওরা আমার চশমা পরা নিয়ে হাসা হাসি করে কেনো, চশমা কি আমি সখ করে পরি নাকি, বিশ্বাস করো মা চশমা ছাড়া আমি বইয়ের অক্ষর চোখে দেখি না

ফাতেমা বেগম- আমি জানি মা,ওরা তো দুষ্টুমি করে,তুই তো বড় মা তোকে এই টুকু মানতে হবে,নে হা কর মা খাইয়ে দিচ্ছি তোকে

এমন সময় আয়ান এলো মিথিলার রুমে
আয়ান- মা তুমি আপুকে খাইয়ে দিচ্ছো কই আমাকে তো এই রকম খাইয়ে দাও না

ফাতেমা বেগম- যা তো মেয়েটার পিছনে সারা দিন তোরা দু ভাই বোন পড়ে থাকিস,

আয়ান- ঠিক আছে যাচ্ছি,তার পর মিথিলার দিকে তাকিয়ে বল্লো এই যে মেঝো আপ্পি মায়ের কলিজার টুকরা আপনার বান্ধুবী আসছে ড্রইং রুমে বসে আছে, রুমে আসতে বলবো

মিথিলা- কে অরনি? পাঠিয়ে দে তা হলে
আয়ান চলে যায়,কিচ্ছুক্ষন পর অরনি রুমে আসে

অরনি- কিরে তুই এখন ও নাস্তা করিসনি,স্কুলে যাবি না

মিথিলা- না পরিক্ষার আর অল্প বাকি,ভাবছি এখন বাসা থেকেই পড়া শুনা করবো

অরনি- তা বললে শুনছি না
এদিকে ইহানরা সবাই বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন নিয়ে ব্যাস্ত,আর তুই বই নিয়ে,তা হলে বিদায় অনুষ্ঠানে বাকি কাজ কে করবে

মিথিলা- কেনো তুই তো বললি ইহান রা সবাই করছে,তা হলে সেখানে আমার কি কাজ

অরনি- ইহান দের হ্যাল্পিং হ্যান্ড লাগবে না?

মিথিলা- আমি পারবো না

অরনি- ঠিক আছে কাজ না করিস সাথে তো থাকবি চল রেডি হয়ে নে

মিথিলা- দোস্ত দেখ এই কিছুদিন পরেই পরিক্ষা এখন বিদায় অনুষ্ঠানের পাল্লায় পড়ে যদি না পড়ি তা হলে এক্সাম দিবো কি করে,

অরনি- তুই যাবি কি না বল,তুই যদি এখন আমার সাথে না যাস তা হলে তোর সাথে আমার কোন কথা নেই,আর কোন দিন কথা হবে ও না

মিথিলা- এটা কিন্তু ঠিক নয় অরু তুই আমাকে ব্ল্যাকমেইল করছিস

অরনি হেসে বল্লো
– ব্ল্যাকমেইল থেকে যদি দারুণ কিছু হয় তা হলে ব্ল্যাকমেইল ই ভালো

মিথিলা- ফাজি ব্ল্যাকমেইলার
মিথিলা আর অরনি বেরিয়ে পড়লো,

to be continue