খেলাঘর পর্ব-২১

0
1877

খেলাঘর পর্ব-২১
লেখা – সুলতানা ইতি

ইভান এখন মিথিলা কে অনেক বেশি সময় দেয় যেন সে স্বাভাবিক হতে পারে,,আস্তে আস্তে মিথিলা স্বাভাবিক হতে চেষ্টা করে,এখন ইভানের সাথে ও সে কথা বলে

ইভানের টুকি টাকি কাজ কর্ম নিজের ইচ্ছেতে করে দেয়,ইভানকে বলতে হয়না

ইভান- মিথিলা এই মিথিলা কোথায় তুমি

মিথিলা কিচেনে নাস্তা বানাচ্ছিলো এখন মিথিলা সকাল দুপুর রাত সব রান্নাই করে, ইভানের ডাক শুনে মিথিলা বুয়াকে বল্লো
খালা আপনি টেবিলে নাস্তা সাজিয়ে দিন,, উনি কেনো ডাকছে আমি শুনে আসছি

– বলুন কি বলবেন
ইভান- কি বলবো মানে,তুমি জানো না আজ আমার অফিসে জরুরী মিটিং আছে,তাই আজ অন্য দিনের ছেয়ে তাড়া তাড়ি বেরুতে হবে

মিথিলা- হুম তো যান দাঁড়িয়ে আছেন কেনো টেবিলে নাস্তা দিয়ে দিয়েছি

ইভান- যান মানে এটা বেধে দিবে কে

মিথিলা মুচকি হেসে বল্লো
টাই টা দিন বেধে দিচ্ছি আপনি না একদম বাচ্ছাদের মতো বিহেভ করেন,,অথচ এই বয়স হচ্ছে আপনার বাচ্ছা পালার বয়স
আর আপনি কি না বাচ্ছা হয়ে যাচ্ছেন দিনে দিনে

ইভান- ওহ হো মিথিলা আদি কালের দাদিদের মতো বিয়ে হতে না হতে বাচ্ছা বাচ্ছা করো না তো,,

মিথিলা- আমি কি আপনার কাছে বাচ্ছা এখন ছেয়েছি নাকি কিন্তু আমরা তো একদিন বাবা মা হবো তাই না

ইভান- নো য়ে,আগামি দশ বছরের আগে বাচ্ছার কথা ঠোঁটে ও আনবে না এমনিতে ও বাচ্ছা হলে ফিগার নষ্ট হয়ে যাবে তোমার

মিথিলা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ইভানের দিকে বলে কি এই লোকে দশ বছর ততদিনে তো আমি বুড়ি হয়ে যাবো আমার বাচ্ছা পালবে কে

ইভান- সুইট হার্ট হা করে থেকো না চলো চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে আমার

ইভান নাস্তা খেয়ে বেরিয়ে গেলো মিথিলা সারা সকাল বসে বসে ইভানের কথা গুলো ভাবছে দশবছরে ও বাচ্ছা নেবো না হায় হায় বলে কি,আমি তো মাস্টার্স কম্পলিট করার আগেই বাচ্ছা নিবো ভেবে ছিলাম আর উনি কি না দূর ছঁাই ভাবতে ভাবতে অনেক বেলা হয়ে গেছে আজ দুপুরের রান্না রাঁধবো কখন

এমন সময় মিথিলার ফোন বেজে উঠে
উফফ এই সময় আবার কে ফোন করলো? ওহ নির্ঝরিণী!
হ্যালো নির্ঝর বল
নির্ঝরিণী – কেমন আছিস আপু

মিথিলা- ভালো তুই কেমন আছিস,মা কেমন আছে

নির্ঝরিণী – আমি ভালো আছি আপু,মা ভালো নেই, গত কয়েক দিন থেকে মা বিছানা থেকে উঠতে পারছে না

মিথিলা- আমাকে আগে বলিস নি কেনো, ডাক্তার দেখিয়েছিস,,

নির্ঝরিণী – ডাক্তার দেখিয়েছি এ দিকে…..

মিথিলা- কি বল থেমে গেলি কেনো

নির্ঝরিণী – আপু আয়ান এখন আর পড়াশুনা করে না স্কুলে যায় না অনেক রাত করে বাড়ি ফিরে, আপু আমার মনে হয় আয়ান বাজে ছেলেদের সাথে আড্ডা দেয়,আপু আমার না খুব ভয় করছে

মিথিলা- আয়ান এমন করছে? আমার তো বিশ্বাস ই হচ্ছে না, আচ্ছা তুই ভয় পাস না মার দিকে খেয়াল রাখিস আমি দেখি কি করতে পারি,আচ্ছা এখন রাখ রে রান্না বসাতে হবে এখন আমাকে

মিথিলা কল অফ করে দিয়ে চিন্তায় পড়লো কি হলো আয়ানের,, ও দুষ্টু ছিলো ঠিক কিন্তু এতো টা তো অনিয়ম ছিলো না, তা হলে?, হায় আল্লাহ বাবা যেতে যেতে কি হয়ে গেলো মা অসুস্থ ভাই কেমন হয়ে গেলো কি করবো এখন আমি

আজ ইভান অফিসে আসতে আসতে লেইট হয়ে গেছে,এদিকে আর এন কম্পানির লোকেরা এসে গেছে তারা মিটিং রুমে অপেক্ষা করছে ইভান এসেই মিটিং রুমে চলে যায়,
ইভান মিটিং রুমে ডুকেই আর এন কম্পানির নতুন এমডির সাথে পরিচিত হতে গিয়ে একটা বড়সড় শকড খেলো,কোন ভাবে মিটিং টা শেষ কতে ইভান নিজের ক্যাবিনে এসে চেয়ার গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে, উলটাচ্ছে স্মৃতির পাতা

অস্ট্রিয়া থেকে ফেরার দুই দিন আগে নায়ার সাথে মিট করতে গিয়ে নায়া কে বলেছিলো দেশে ফিরেই আব্বু আম্মু কে বলে বিয়ের কথা ফাইনাল করবে,
নায়া সেদিন খুব কেঁদে ছিলো, কান্নাভেজা কন্ঠে আমার হাত ধরে বলেছিলো
– ইভান প্লিজ আমায় ভুলে যেও না,,খুব ভয় করছে আমার, শুনেছি চোখের আড়াল হলে নাকি মনের আড়াল হয়ে যায়, কথা টা যেন সত্যি না হয়

সেদিন নায়াকে আমি অনেক করে বুঝিয়ে রেখে এসেছি,কিন্তু দেশে আসার পর আব্বু আম্মুর একটা ই কথা নায়ার সাথে যেন কোন যোগাযোগ না রাখি, ফেলতে পারিনি আমি আব্বু আম্মুর কথা,,নায়ার সব স্মৃতি ভুলতে চেষ্টা করেছি,আজ ও সেই চেষ্টা করি আর এখন সেই নায়া আমার সামনে আচ্ছা নায়া আর এন কম্পানির নতুন এমডি যাদের সাথে আমাদের বিজনেস আগা মাথা ঝড়িয়ে আছে

এমন সময় ক্যাবিনের দরজায় নক হলো
আয়ান চোখ বন্ধ রেখেই বল্লো
– ইয়েস কাম

কি ব্যাপার চোখ বন্ধ করে আছো যে,নাকি আবার কি করে সিটিংবাজি করবে সেটা ভাবছো

ইভান চোখ খুলে দেখে নায়া ইভানের সামনে
ইভান মুখে হাসি টানার ব্যার্থ চেষ্টা করে বল্লো
– বসো

নায়া- থ্যাংস তুমি না বললে ও আমি বসতাম অনেক পুরোনো হিসেব কষার বাকি আছে যে

কেনো এমন করলে ইভান ভালোবাসার হাত তুমি বাড়িয়ে দিয়েছো আমার দিকে,তা হলে তোমার বাড়ানো হাত টা ফিরিয়ে না দেয়া কি আমার অপরাধ ছিলো

ইভান- এমন করে বলো না নায়া আমি তো এখন ও তোমায়……
ইভান কথা শেষ করতে পারলো না তার আগেই ইভানে কল আসে

ইভান কল রিসিভ করে
– হ্যালো?

অপাড় থেকে মিথিলা বলে
– আজ বাসায় লাঞ্চ করবেন না? লাঞ্চের সময় ফেরিয়ে যাচ্ছে

ইভান- আমি তোমায় পরে কল করছি

ইভান কল অফ করে দেয়
নায়া- কার ফোন ছিলো তোমার বউয়ের?

ইভান অবাক চোখে তাকিয়ে আছে নায়ার দিকে

নায়া- অবাক হওয়ার কিছু নেই তুমি কি ভেবেছো যে আমার সাথে চিটারি করেছে তাকে আমি এ ভাবে ছেড়ে দিবো,না এএতো সহযে নয় তাই তো দেশে এসেই তোমার সম্পর্কে খোজ নিতে শুরু করি আর পেয়ে ও যায় খুব সহজে,
আমাকে শুধু একটা কথা বলো কি এমন পেয়েছো ঐ হাভা মেয়েটির মাঝে,যা আমার মাঝে ছিলো না?

ইভান কথার প্রসংগ পাল্টানোর জন্য বল্লো
– কি খাবে বলো?

নায়া কর্কশ কন্ঠে বল্লো
আমি তোমার সাথে রসালাপ করতে আসিনি

ইভান এবার শক্ত কন্ঠে বল্লো
– আমি তোমার কোন কথার উত্তর দিবো না,,

to be continue
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে