স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_০৩

0
3530

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_০৩
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

“তমা তোমাকে কি রাজশাহী থাকাকালীন কোন ছেলে প্রপোজ করছে।”
“হ্যা প্রপোজতো করছে।”
“হুম(গম্ভীর কণ্ঠে)।এরপর,”
“এরপর… কি?”
“এরপর কি তুমি প্রপোজাল একসেপ্ট করছ?”
“হ্যা,”……বলে উনার মুখের দিকে তাকালাম।একেবারে অগ্নিশর্মা হয়ে আমার দিকে ভয়ানক দৃষ্টিতে আছে।আমার তো জ্ঞান যায় যায় অবস্থা।
“না,মানে ভেবেছিলাম একসেপ্ট করব।পরে দিয়ে আর করি নাই।”(ভয়ে মিনমিনে কণ্ঠে)
“গুড।কেউ করলেও একসেপ্ট করবা না।বুঝতে পারছ।এইসব ভালো না।পড়ালেখা করছ পড়ালেখায়ই মনোযোগটা বসাও।আগে দূরে ছিলে তাই তোমার উপর নজর রাখতে পারিনি কিন্তু এখন তোমাকে সবসময় চোখের নজরে রাখব।যেহেতু আমার চোখের নজরে এখন তুমি সবসময় থাকবে তাই কোনকিছু হলে তার সব খবর আমি পাব।”
“প্লিজ হাতটা ছাড়েন।ব্যথা করছে।…..কথাটা বলেই কেঁদে দিলাম।”
হাতটা ছেড়ে দিয়ে বললেন,”বুঝতে পারেনি এতটা লাগবে।আচ্ছা শুনো আজকে বিকালে তোমাকে নিয়ে বেড়াতে যাব। রেডি থাকিও।”
“পারবো না।”
“কেন?”
“কোথাও ঘুরতে যেতে আর ভালো লাগে না।”
“এটা কি তুমি বলছ?যে কিনা বাইরে ঘুরার জন্য পুরাই পাগল আজ সে কিনা বলছে বাইরে ঘুরতে যাবে না।তমা তুমি আগের থেকে অনেক বদলে গেছ। ”
“কি জানি!তাচ্ছিল্য সুরে কথাটা বলল।”

“কিছুক্ষণ ভেবে,এতশত বুঝি না রেডি থাকিও।বিকালে তোমাকে নিতে আসবো।”

আড়ালে মুখটা ভেংচিয়ে দিলাম।উনি বললেন আর আমাকে উনার কথা মানতে হবে অসহ্য।
.
.
বাসায় এসে,চিটপতাং হয়ে বিছানায় শুয়ে গেলাম।খুব ক্লান্ত লাগছিল।কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম টেরই পেলাম না।
বিকালের দিকে,,
লাকেজটা নজরে পড়ল।এখনো কাপড়গুলো বের করে রাখে নি।কাপড়গুলো লাকেজ থেকে বের করে ওয়ারড্রবে একটা একটা করে রাখছি।

“কিরে তমা,,ঘুম থেকে উঠেছিস।”
“হ্যা মামণি মুচকি হেসে।”
“আচ্ছা তমা মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন বারবার খচখচ করছে।প্রশ্ন না করেই পারছি না।”
“কি প্রশ্ন মামণি?”
“তুই যখন ঘুমাচ্ছিলে তখন তোর গলায় অনেক বড় একটা আচড় দেখলাম।আচড়টা দেখেই আমার আত্মাটা কেঁপে উঠেছিল।মনে খুব আজেবাজে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল। এতবড় একটা আচড়ের দাগ তোর গলায় কিভাবে এল?”

মামণি,বলে ভয়ে কাঁপতে লাগলাম।মামণিকে কোনদিনও মিথ্যা বলে নি।এর উত্তর কি দিব ভাবতেই পারছিলাম না।
.
.
“আরে তমা আপু এখনো রেডি হও নি।আর এই যে আন্টি তোমাকে বললাম না তমা আপুকে এই শাড়িটা পড়িয়ে দিতে।কিচ্ছুইতো করলা না এখনো” কোমড়ে হাত দিয়ে রেগে নিপা কথাটা বলল।
“ও সরি,, একদম ভুলে গেছি আমি। তমা আয় শাড়িটা পড়িয়ে দিই।”

“কি হচ্ছে এইসব? এই অবেলায় শাড়ি কেন পড়তে যাব। আর শাড়িটা কে আনলো?”
“আপু তোমার এত ভুলা মন কেন?ভাইয়া না তোমাকে বলল,বিকালে রেডি হয়ে থাকতে।এই শাড়িটা ভাইয়া পাঠিয়েছে।বলেছে এই শাড়িটা পড়তে।নাও তাড়াতাড়ি কর।আমি তোমাকে পড়িয়ে দিচ্ছি। আন্টি তুমি বাইরে যাও।আপুর সাথে অনেক কথা আছে।”

“মুচকি হেসে,,আচ্ছা তাহলে ওকে রেডি করিয়ে দে।”
.
.
“এই পুচকি, তোর ভাইকে গিয়ে বলে আয় আমি কোথাও যাচ্ছি না।এই শাড়িটাও নিয়ে যা।”
“হুম বললেই হল।এখন এইসব কথা বললে,,ভাইয়া অনেক রেগে যাবে। তুমি বুঝি জানো না ভাইয়ার রাগ কেমন।শুধু শুধু ভাইয়াকে রাগাতে তোমার ভালো লাগে না?”

তমার মুখের দিকে তাকিয়ে নিপা আবারো বলল,”আপু রিলেক্স।আমিও তোমাদের সাথে যাচ্ছি। এত ভয় পেতে হবে না।”
“তুইও সাথে যাবি।”
“হুম যাবতো।ভাইয়া হঠাৎ কি জানি মনে করে আমাকে দুপুরের দিকে বলল,তোমরা বেড়াতে যাচ্ছ।আমিও যেন তোমাদের সাথে যায়। তোমার সাথে যাব বলে কথা…. তাই রাজি হয়ে গেলাম।”

প্যাকেটে শাড়িটা ছিল।প্যাকেট খুলে দেখি কলাপাতা রংয়ের একটা সুতি শাড়ি।অনেক সুন্দর শাড়িটা।ব্যাটার পছন্দ আছে দেখি তাহলে।নিপা সুন্দর করে শাড়িটা পড়িয়ে দিল।

“শুনো আপু শাড়ি পড়াটা তাড়াতাড়ি শিখে ফেল বুঝলে।দরকারে শাড়ি পড়ার সময় আমাকেতো আর সবসময় পাবে না।তবে হ্যা তুমি যদি আমার ভাইটাকে বিয়ে কর তাহলে ছোট ননদ হিসেবে তোমাকে সবসময় আমি শাড়ি পড়িয়ে দিতে রাজি আছি কথাটা বলে নিপা একটা শয়তানি হাসি দিল।”
“দিবো একটা। সবসময় খালি ফাজলামি।”
“আচ্ছা শুনো তোমার লম্বা চুলটা খোলা রাখবা,চোখে কাজল,আর নাকে একটা ছোট সাদা পাথরের নাকফুল পড়বা।আর কিছু করতে হবে না।গালে আটা ময়দা , ঠোটে লিপিস্টক দেওয়ার দরকার নাই।একদম ন্যাচারালভাবে সাজবা।”
“ওই এইসব করতে কে বলছে?”
“ভাইয়া বলছে।যা বলছি তাই করবা।একটু কম বেশি হলে জানোতোই…… “বলে আবার শয়তানিমার্কা হাসিটা দিলো।

উফ অসহ্য একটা।কি শুরু করলটা উনি?সবসময় উনি যাই বলবেন তাই করা লাগবে। অসহ্য একটা।কথাগুলো বিড়বিড় করে চুলগুলো আচড়াতে লাগলাম।
“এই তমা আপু, তোমার লাগেজের এই লেহেঙ্গাটাতো খুব সুন্দর।কে দিয়েছে এটা?”
“কোনটা?”
“এই যে…. এইটা। ”

তাকিয়ে সাদা রংয়ের লেহেঙ্গা।”এটা এইখানে কিভাবে এল?(মনে মনে)।এই এইটা এখানে দে?”
“আরে একটু দেখতো দাও না।খুব সুন্দর লেহেঙ্গাটা। কে দিয়েছে এটা বল না?”
“জোর করে ওর কাছ থেকে লেহেঙ্গাটা নিয়ে ফেললাম।আর দেখতে হবে না।তুই বাইরে যা। আমি এখুনি আসছি।”

নিপা মন খারাপ করে চলে গেল।আর আমি লেহেঙ্গাটার দিকে তাকিয়ে আছি।মনটা আবারো খারাপ হয়ে গেল।বাইরে থেকে এসে এই কাপড়টা আগুনে পুড়িয়ে ফেলবো। যার জন্য আমার সব স্বপ্ন,আশা,বেঁচে থাকাটা কষ্টসসাধ্য হয়ে গেছে তার দেওয়া কোন জিনিস রেখে দেওয়ার মানেই হয় না।শুধু এই কাপড়টা আগুনে পুড়িয়ে ফেলতে ভুলতে গেছি।আজ সেটাও পুড়িয়ে মনের আগুন নিভাবো।
.
.
“এতক্ষণ লাগে!বাব্বাহ!”
…….
“কি ব্যাপার মন খারাপ নাকি?কথার জবাব দিচ্ছ না যে?নিপাও আমার কাছে এসে কোন কথা বলল না।তোমাদের দুইজনের হয়েছেটা কি!?”
“কিছু না। কোথায় যাবেন?”
“আজকে একটা মেলা বসেছে।চল সেখানে যায়।”
“হুম।”

আমি আর উনি মানে আহাদ একসাথে হাঁটছি।আর নিপা পিছনে মন খারাপ করে হাঁটছে।বুঝতে পারছি নিপাকে ধমক দেওয়াতে ও অনেক কষ্ট পেয়েছে।

“এই তমা দেখতো আমাকে কেমন লাগছে।”

উনার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।সাদা পাঞ্জাবী পড়েছেন।ভালোই লাগছে দেখতে।(মনে মনে)
“হুম ভালোই লাগছে।” আমার কথাটা শুনেই উনি মুচকি হাসি দিলেন।উনি কালো হলেও হাসিটা অনেক সুন্দর।হয়ত উনার গায়ের এই কালো রংয়ের জন্য কেউ হয়ত উনাকে ভালবাসতে নাও পারেন কিন্তু কোন মেয়ে যদি একবার উনার মুখের হাসিটা দেখে থাকে তাহলে আমি নিশ্চিত উনার এই হাসির প্রেমে অনেক মেয়েই পড়ে যাবে।
“এইভাবে তাকিও না।”
“মা…মানে।”
“ছেলেমানুষের দিকে এভাবে তাকাতে নেই।যদি তোমার বিএফ বা হাসবেন্ড হতাম তাহলে আমার দিকে এইভাবে তাকালে আমার কোন প্রবলেম হত না।কিন্তু এখন নাতো আমি তোমার হাসবেন্ড আর নাতো বিএফ।সো এইভাবে একটা ছেলের দিকে তাকানোটা আমি উচিত মনে করি না “কথাটা বলেই মুচকি হাসলেন।

আজব পাগল একটা।উনি একটু পর পর আমার দিকে আড়চোখে তাকাবেন তাতে কোন প্রবলেম হয় না আর আমি এমনে একটু তাকালেইই প্রবলেম হয়ে যায়। আর কি বলল উনি যদি আমার হাসবেন্ড বা বিএফ হতো…….। ছিহ উনার মতন কালুকে আমার হাসবেন্ড বা বিএফ বানানোর কোন ইচ্ছে নেই।আমি মরে যাব তবুও উনাকে বিয়ে করে আমার হাসবেন্ড বানাবো না।করলে কোন সুন্দর হ্যান্ডসাম ছেলেকে বিয়ে করব।সুন্দর, হ্যান্ডসাম…….কথাটা মনে পড়তে বুকের ভেতরটা জ্বলে উঠল। কোন একসময়তো এইরকম সুন্দর আর হ্যান্ডসাম ছেলে আমার জীবনে এসেছিল কিন্তু আমাকে দেওয়া সে ওয়াদার মর্যাদা সে রাখতে পারেনি।আর বিয়ে….?বিয়ে করার কথাটা আমার মাথায় কিভাবে আসলো।এত কিছু হয়ে গেল আমার সাথে তারপরও কোন আক্কেলে এতবড় স্পর্ধা আমার হয়।চোখ থেকে অজান্তে পানি চলে এল।
.
.
“তমা কাঁদছ কেন?ইশ ব্যথা পেয়েছ।আসলে তোমার হাতে চুড়ি পড়াচ্ছিলাম, হাতে লেগে যাবে ভাবতে পারে নি।”

হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি উনি আমার হাতে চুড়ি পড়িয়ে দিচ্ছেন।

“আরে,,হাতে চুড়ি পড়াচ্ছেন কেন?”
“চুড়িগুলো ভালো লাগল তাই পড়িয়ে দিচ্ছি।হাতে কি খুব লেগেছে?”
“না”
“তাহলে কাঁদছ যে?”
“চোখে জানি কি পড়ছে তাই চোখ থেকে পানি পড়ছে।ও কিছু না।”
“আমাকে কি তুমি বোকা ভাব।যা বুঝাবা তাই বুঝব।”

উনার চোখের দিকে তাকিয়ে আছি।আসলেই কি উনি আমাকে বুঝেন?নাকি……
“তমা চল ওইখানটায় যায়। ফুচকা বিক্রি করছে।আর এই নিপা তুই এত পিছে কেন? আয় আমাদের সাথে।”
.
.
সারাদিন তিনজন মিলে ঘুরলাম। বেশ ভালোই লাগল।বাসায় এসে আগে ওই লেহেঙ্গাটা পুড়িয়ে ফেললাম।এ কয়েকদিনে কোনরকমভাবে নিজেকে সামলিয়ে নিলেও এই লেহেঙ্গাটা দেখার পর আর নিজের কষ্টগুলো চাপিয়ে রাখতে পারছি না।কান্নার সাথে সাথে খুব কষ্ট হচ্ছে।ওর সাথে কাটানো মূর্হুতগুলো,ওর দেওয়া আঘাত আর বিশ্বাসঘাতকতা আজকে আমার স্মৃতিতে আরো প্রখর হচ্ছে।বিশেষ করে ওর সেই আওয়াজটা বারবার কানে বেজে উঠছিল,,
“আমি পরিবারের একমাত্র সন্তান।আমি মরে গেলে ওরা আর বাঁচবে না।তাই জেনেশুনে আমি নিজের ঘাড়ে নিশ্চিত মৃত্যু নিতে পারবো না।তাই তোমাকে ছেড়ে চলে যেতে আমি বাধ্য হচ্ছি।পারলে আমাকে ক্ষমা কর।”

কেন তুমি সেদিন এমন করলে তানভীর।কতটায় না তোমাকে বিশ্বাস করতাম।তোমার কথার ভরসায় সেদিন এতটা আস্পর্ধা করেছিলাম।কিন্তু সেইতো তুমি তোমার কথার খেলাপ করে শুধু নিজেকে বাঁচাতে আমাকে সেদিন বিপদের মুখে ফেলে চলে গেলে।যদি একটু সাহস করে সেদিন বিপদের সাথে মোকাবেলা করতে তাহলে আমার এতবড় ক্ষতি হত না এই বিশ্বাসটা আমি তখনো মনে করতাম আর এখনো করি।কোনদিনও তোমাকে ক্ষমা করবো না,,কোনদিনও না।
.
.
ঘরের কাজ সেরে মেঘ নিজের রুমে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে।বালিশের নিচ থেকে তার স্বামী তন্ময়ের ছবিটা বের করল।জীবন্ত তন্ময়ের সাথেতো আর কথা বলতে পারে না তাই তার স্বামীর ছবি দেখে অব্যক্ত গোপন কথাগুলো বলে।কত স্বপ্ন দেখেছিল সে তন্ময়কে নিয়ে। ওকে নিয়ে বাকিটা জীবন সুখের সাগরে পাড়ি দিবে।কিন্তু তা আর হল না।মেঘের স্বপ্ন শুধু স্বপ্ন রয়ে গেল।নাতো সে পেল তার স্বামীর ভালোবাসা,আর নাতো তার মেয়ে তমা পেল বাবার ভালবাসা।তন্ময়ের হয়তো ওদের দুইজনের কাউকে প্রয়োজন নেই।তাই এতটা বছর পাড় হয়ে গেল সে নিজ থেকে কোন খোঁজ-খবর নিল না।মেঘও আর সাহস করে ওর স্বামীর খোঁজ নেয়নি।কারণ সে জানে তন্ময় তার দ্বিতীয় স্ত্রী আর সন্তান নিয়ে খুব সুখে আছে।তাই হয়ত মেঘ আর তার মেয়ের খোঁজ নেওয়ার কোন ইচ্ছায় তার হয়নি।

(বি.দ্র.স্যারযখনস্বামীসিজন_২ টা আগের সিজনকে কেন্দ্র করেই লিখছি।আগের সিজনে শুধু মেঘ আর তন্ময়ের ভালবাসার কাহিনী ছিল।কিন্তু বিয়ের পরবর্তী জীবনে ওদের ভালবাসার পরিণতি কি হয়েছিল সেটা আমি লিখি নি।ওদের ভালবাসার পরিণতি সিজন ২ তে প্রকাশ করব।মেঘ আর তন্ময়ের মেয়ে হচ্ছে তমা।গল্পের নায়িকা এবার যেহেতু তমা তাই ওর মাধ্যমে ওর মা বাবার ভালবাসার পরিণতি উল্লেখ করব সেইসাথে তমা আর গল্পের নায়কের লাভস্টোরিতো থাকবেই।মেঘ আর তন্ময়ের ভালবাসার পরিণতি সুখ নাকি দুঃখের ছিল তা জানার জন্য আমার গল্পের সাথে থাকবেন এই আশা করছি আপনাদের কাছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে