শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ২৭

0
1867

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ২৭

লেখিকা: সুলতানা তমা

একটু রেস্ট নিতে গিয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বুঝতেই পারিনি। হঠাৎ চুলে কারো হাতের স্পর্শে ঘুম ভেঙে গেলো। তাকিয়ে দেখি ছোটমা।
আমি: ছোটমা তুমি কিছু বলবে
ছোটমা: তোর ফোন কোথায়
আমি: দেখিনি
ছোটমা: সেই সকাল বেলা ঘুমিয়েছিলি বিকেল হয়ে গেছে….
আমি: কি (তাড়াতাড়ি দেয়াল ঘড়িতে তাকালাম সত্যিই তো পাঁচটা বাজে। এতো সময় ঘুমালাম আমি)
ছোটমা: তুই ক্লান্ত ছিলি জানি তাই আর ডাকিনি কিন্তু
আমি: কি
ছোটমা: আলিফা বার বার ফোন করছে তুই যাওয়ার জন্য
আমি: আজকে রাগিণী আমার বারোটা বাজাবে (তাড়াতাড়ি উঠে পড়লাম, ফোনটা টেবিলের উপর দেখে হাতে নিয়েই এক দৌড় দিলাম)
ছোটমা: রিফাত কিছু খেয়ে যা
আমি: খেয়ে নিবো চিন্তা করো না।

এতো তাড়াহুড়ো করে হসপিটালে এসে এমন দৃশ্য দেখবো ভাবতেও পারিনি। আলিফা রাতুলের কাধে মাথা রেখে বসে আছে, দরজা থেকে দেখেই চলে আসতে চাইলাম। আলিফা ডাক দিলো।
আমি: রিফাত যেও না (আলিফা আমাকে ডাক দিতেই রাতুল সরে বসলো, আমি মৃদু হেসে আলিফার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম)
আলিফা: কয়টা বাজে
আমি: সরি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম
আলিফা: রাগ করেছি
আমি: সরি তো এইযে কান ধরছি
আলিফা: যাও মাফ করে দিলাম
আমি: মাফ চাওয়ার আগেই মাফ করে দিয়েছ (হঠাৎ মনে পড়লো সেদিন ও মাফ করে দিয়েছি বলাতে ঠোঁটে মায়া দিছিলাম কিন্তু আজ…)
আলিফা: কি হলো এভাবে হা করে দাঁড়িয়ে আছ কেন
রাতুল: আমি এখানে আছি তো তাই হয়তো ভাইয়ার খারাপ লাগছে
আমি: না না খারাপ লাগবে কেন আসলে ঘুম থেকে উঠেই তাড়াহুড়ো করে চলে এসেছি তো কে….
আলিফা: এতো তাড়াহুড়ো করে আসতে বলছে কে, ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে আসবা তো (একদিকে রাতুলের কাধে মাথা রাখে আবার আমার প্রতি মায়া দেখায়, ইচ্ছে হচ্ছে এখন…)
আলিফা: কি হলো চুপ হয়ে আছ কেন
আমি: এমনি
রাতুল: আলিফা আমাকে এখন যেতে হবে প্লিজ
আলিফা: ওকে যাও।

রাতুল চলে যেতেই আলিফার থেকে দূরে এসে বসলাম, মোবাইল বের করে গেইম খেলায় মন দিলাম। আলিফাকে যতো এড়িয়ে চলবো এখন ততোই কষ্ট কম পাবো। তাই নিজেকে ব্যস্ত রাখাই উত্তম কাজ।
আলিফা: রিফাত তুমি তো বলো আমার থেকে দূরে থাকো না তাহলে এখন কি কাছে আছ
আমি: (নিশ্চুপ)
আলিফা: রিফাত
আমি: (নিশ্চুপ)
আলিফা: কথা বলছ না কেন
আমি: রাতুলের কাধে মাথা রেখে দিব্বিই তো ছিলে তাহলে এখন আমার সাথে কথা বলার জন্য পাগল হয়েছ কেন
আলিফা: ওহ এই জন্য রাগ করেছ
আমি: রাগ তার উপর করা যায় যে ভালোবাসে তুমি তো…
আলিফ: কি আমি তোমাকে ভালোবাসি না
আমি: (মৃদু হাসলাম)
আলিফা: বলছ না কেন
আমি: প্রশ্নটা নিজের মন কে করো আমার চেয়ে সে ভালো উত্তর দিতে পারবে
আলিফা: কোথায় যাচ্ছ।
ওর সামনে যতো থাকবো ততোই কষ্ট পাবো। কেবিনের বাইরে এসে বসে রইলাম।
নার্স: আপনি এই কেবিনের মেয়েটির হাজবেন্ড না (হঠাৎ নার্স এর কথায় সামনে তাকালাম)
আমি: হ্যাঁ কেন
নার্স: আপনি এখানে বসে আছেন কেন, জানেন আপনার স্ত্রী আজ সারাদিন কিছু খাননি ওষুধ পর্যন্ত খাননি
আমি: মানে কেন
নার্স: আপনার উপর রাগ করে, কতোবার যে আমাকে জিজ্ঞেস করেছে আপনি এসেছেন কিনা। (বোকার মতো বসে আছি নার্স কি বলছে এসব)
নার্স: আরেকজন ছেলে যে আসে উনি অনেকবার চেষ্টা করেছেন কিন্তু কিছু খাওয়াতে পারেননি। আপনার স্ত্রীর একটাই কথা আপনি ফোন রিসিভ না করলে এখানে না আসলে কিছু খাবে না। আপনি প্লিজ ভিতরে যান উনি ওষুধ না খেলে প্রবলেম হয়ে যাবে
আমি: ঠিক আছে।

ভিতরে এসে দেখি আলিফা নিশ্চুপ হয়ে শুয়ে আছে, ওর দুই চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি পড়ছে। আস্তে গিয়ে ওর পাশে বসে চোখের পানি আলতো করে মুছে দিলাম।
আমি: কাঁদছ কেন
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আমি: আমি যাইনি তো বাইরে বসে ছিলাম
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আমি: রাগিণী কে কাঁদলে একদম মানায় না (কথাটা বলতেই কাঁদতে কাঁদতে এসে আমাকে জরিয়ে ধরলো)
আমি: পাগলী এভাবে কাঁদছ কেন
আলিফা: সরি আর কখনো রাতুলের কাধে মাথা রাখবো না আসলে ও খুব রিকুয়েস্ট করছিল তাই, আর হবে না তুমি আমার উপর রাগ করে চলে যেও না প্লিজ
আমি: দূর পাগলী আমি তোমার উপর রাগ করে চলে যেতে পারবো নাকি আমি তো বাইরে বসে ছিলাম
আলিফা: ইসস আমি না জেনে অজতাই এতোক্ষণ কেঁদেছি। (চোখের পানি মুছে এসে আমার কাধে মাথা রেখে আমাকে জরিয়ে ধরলো। আমিও জরিয়ে ধরলাম)
আমি: সারাদিন কিছু খাওনি কেন
আলিফা: তোমাকে পাঠাইছিলাম নীলিমার সাথে কথা বলার জন্য আর তুমি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছ, আমি তো জানতাম না সারাদিন ফোন দিয়েছি রিসিভ করনি সন্ধ্যায় বাসায় ফোন করার পর ছোটমা বললো তুমি ঘুমে তাই রাগ করে সারাদিন খাইনি
আমি: রিয়ান কোথায় ও তোমাকে খাওয়াতে পারলো না
আলিফা: ও তো বিকেলে চলে গেছে বললো বন্ধু ফোন করেছে। তখন অবশ্য রাতুল চলে এসেছিল।
আমি: আচ্ছা এখন খেয়ে ওষুধ খেয়ে নাও
আলিফা: আমার এখানে একদম ভালো লাগছে না, ডক্টর তো বলেছে বাসায় চলে যেতে পারবো
আমি: হ্যাঁ বলেছে তবে বাসায় নিয়ে….
আলিফ: সেবা করতে হবে তাই তো। সেবা করার জন্য তো তুমি আছ প্লিজ
আমি: ঠিক আছে যদি সকালে রিলিজ করে দেয় তাহলে বাসায় নিয়ে যাবো
আলিফা: হিহিহি থ্যাংকু (হাসতে হাসতে এসে আমার গালে চুমু দিয়ে দিলো, আমি তো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। এই প্রথম ও আমায় নিজে থেকে চুমু দিয়েছে)
আলিফা: কি হলো (আলিফার ধাক্কায় হুশ ফিরলো, ওর চোখের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বললাম)
আমি: কিছু হয়নি শুধু তোমার ছুঁয়ায় একটু জমে গিয়েছিলাম (কিছুক্ষণ কি যেন ভাবলো পরক্ষণেই লজ্জায় আমার বুকে মুখ লুকালো, পাগলী একটা।)

সকাল হতেই ডক্টর এর সাথে আলিফাকে রিলিজ করে দেওয়ার কথা বললাম। ডক্টর নিয়ে যেতে বললো তবে সাবধানে থাকতে হবে সবসময় ওর খেয়াল রাখতে হবে। রিয়ানকে ফোন করে আসতে বললাম। সবকিছু গুচাচ্ছি হঠাৎ আমার ফোনের মেসেজটোন বেজে উঠলো। নীলিমার মেসেজ, “ভাইয়া আরোহী কে নিয়ে বাসায় আসছি তুমি চলে এসো”
আলিফা: দেখি কার মেসেজ এতো মন দিয়ে পড়ছ (আমার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিলো, এই পাগলী কে নিয়ে আর পারা যায় না)
আলিফা: তুমি আরোহীকে বাসায় আনতেছ কেন
আমি: শাস্তি দিবো
আলিফা: মানে কি করবে তুমি
আমি: ও আমার নিলাকে খুন করেছে আমি ওকে খুন করবো
আলিফা: একদম চুপ তুমি খুন করে জেলে চলে গেলে আমি কার কাছে যাবো
আমি: কেন রা… (বলতে গিয়েও থেমে গেলাম যদি আবার রাগ করে)
আলিফা: কি বলতে চাইছিলে বলো থেমে গেলে কেন
রিয়ান: ভাইয়া চলো (যাক রিয়ান এসে বাঁচিয়ে দিলো)
আলিফা: বেঁচে গেলে
আমি: হিহিহি।

সারা রাস্তা আলিফা আমার কাধে মাথা রেখে বসে ছিল। বাসায় এসে রিয়ান কলিংবেল চেপেই বললো
রিয়ান: ভাইয়া তুমি ভাবিকে নিয়ে যাও আমি আসছি
আমি: কোথায় যাচ্ছিস
রিয়ান: ভাবি কে কোলে তোলে নিয়ে যাও আসছি।
রিয়ান চলে গেলো, কোথায় যাচ্ছে বলেও গেলো না।
আলিফা: রিয়ানের চিন্তা বাদ দাও আমাকে কোলে করে নিয়ে যাও
আমি: মুটকি মানুষ আমি কোলে নেই না
আলিফা: কি বলেছ
আমি: কিছু না তো।

আলিফাকে কোলে করে নিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি এখনো কেউ দরজা খুলছে না। আবার কলিংবেল চাপতেই দরজা খুললো, সামনে তাকিয়ে দেখি আরোহী দরজা খুলেছে। ইচ্ছে তো হচ্ছে একটা লাত্তি মেরে দেই কিন্তু আলিফা কোলে।
আমি: নীলিমা দরজাটা লাগিয়ে দে।
নীলিমা দরজা লাগিয়ে দিলো, আরোহী এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে অবাক চোখে।

আলিফাকে এনে সোফায় বসিয়ে দিলাম। আরোহী কিছুটা ভয় পেয়ে গেছে ওর মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।
আমি: আব্বু, চাচ্চু, ছোটমা ওরা সবাই কোথায় রে নীলিমা
নীলিমা: রুমেই আছে
আরোহী: মানে কি নীলিমা তুই না বললি বাসায় রিফাত ছাড়া কেউ নেই
আমি: বাসায় আমি একা আছি শুনেই চলে এলে মতলব কি বলো তো
আরোহী: রিফাত আমার সাথে এভাবে কথা বলছ কেন
আমি: খারাপ কিছু বলেছি নাকি
আরোহী: নীলিমা তুই তো বলেছিলি রিফাতকে সব বলেছিস
নীলিমা: বলেছি তো তুমি ভাইয়া কে ভালোবাস আর সেটা আবার তুমি নিজে বলার জন্যই তো বাসায় আনলাম
আমি: হ্যাঁ আরোহী নীলিমা আমাকে বলেছে তুমি আমাকে ভালোবাস। আর এইটা তো নতুন না অনেক আগেই তো তুমি আমাকে প্রপোজ করেছিলে
আরোহী: হ্যাঁ
আমি: তোমার প্রপোজ যদি আমি এখন একসেপ্ট করি
আলিফা: রিফাত কি বলছ এসব
আরোহী: সত্যি বলছ রিফাত (আস্তে আস্তে আরোহীর কাছে গিয়ে ওর সামনে দাঁড়ালাম, ও খুশিতে হাসছে দেখে রাগটা বেড়ে গেলো, ঠাস করে ওর গালে একটা থাপ্পড় দিলাম। আব্বু চাচ্চুরা সবাই ড্রয়িংরুমে চলে এসেছেন এখন শুরু করা যায়। আরো কয়েকটা থাপ্পড় দিলাম)
আরোহী: রিফাত তুমি আমাকে মারছ কেন
নীলিমা: তো তুমি কি ভাইয়ার আদর পাওয়ার জন্য খালি বাসা ভেবে এসেছিলে নাকি
আমি: ওর মতো মেয়ের থেকে তো এটাই আশা করা যায়
আরোহী: কি বলছ তোমরা আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না
আব্বু: রিফাত কি হয়েছে বল তো
আমি: আব্বু চুপচাপ শুধু দেখে যাও
আরোহী: নীলিমা তুই আমাকে অপমান করার জন্য এনেছিস, আমি চলে যাচ্ছি
আমি: যেতে দিলে তো যাবে
আরোহী: কেন করছ এমন
আমি: আরো কয়েকটা থাপ্পড় খেলে পর বুঝতে পারবি কেন করছি এসব
নীলিমা: আমি স্পষ্ট করে বলে দিচ্ছি তুমিও স্পষ্ট করে বলে দাও
আরোহী: কি
নীলিমা: নিলা আপুর পানির গ্লাসে বিষ দিয়েছিলে কেন
আরোহী: মানে
আমি: অবুঝ হবার বান করতে হবে না। নিলার পানির গ্লাসে বিষ দিয়েছিলি, আলিফা আর আমাকে আলাদা করার জন্য ডিভোর্স পেপার রেখেছিলি, আলিফাকে গাড়ি চাপা দিয়ে মারার চেষ্টা করেছিলি। এসব কিছুর প্রমাণ আছে আমার কাছে
ছোটমা: কি বলছিস এসব রিফাত
নীলিমা: আম্মু সব সত্যি
আরোহী: মিথ্যে কথা আমি এসব করিনি
আমি: আবার মিথ্যে….
নীলিমা: ভাইয়া আর কয়েকটা থাপ্পড় দাও দেখবে সত্যি কথা বলে দিবে
আব্বু: রিফাত ওর গায়ে হাত তুলবি না
আমি: হাত না তুললে ও মুখ খুলবে না আব্বু
আরোহী: আমার গায়ে আর একটা আছরও যদি দিয়েছ ভালো হবে না কিন্তু
আমি: কি করবি হ্যাঁ (আরো কয়েকটা থাপ্পড় দিতেই ও চেঁচিয়ে উঠলো)
আরোহী: হ্যাঁ আমি সব করেছি নিলাকে বিষ খাইয়ে মেরেছি, এসবের জন্য আমার এতটুকুও ভয় হয় না বেশ করেছি ওকে মেরে।
ছোটমা: তোমাকে নিজের মেয়ের মতো ভাবতাম আর তুমি কিনা….
আরোহী: কি করবো হ্যাঁ, রিফাতকে আমি পাগলের মতো ভালোবাসি কিন্তু ও আমাকে কোনো পাত্তাই দিতো না। নিলাকে কখনো বুঝতে দেইনি আমি যে রিফাতকে ভালোবাসি কিন্তু রিফাতকে অনেক বার বুঝিয়েছি নিলার চোখের আড়ালে। রিফাত আমার কোনো কথাই শুনেনি ওর মুখে শুধু একটাই নাম শুধু নিলা নিলা নিলা। অসহ্য লাগতো এসব। নিলাকে আরো অনেক আগেই মেরে ফেলতে চেয়েছিলাম কিন্তু ও আমাকে বলেছিল ওর নাকি কি রোগ হয়েছে ডক্টর বলেছে ওর হাতে বেশি সময় নেই, তাই আর মারার চেষ্টা করিনি। নিলা সারাক্ষণ ভয় পেতো কাউকে বলতে পারতো না রিফাত শুনলে কষ্ট পাবে তাই। এর মধ্যেই সবাই রিফাত আর নিলার বিয়ে ঠিক করে। ভেবেছিলাম বিয়ের আগেই ও মারা যাবে কিন্তু ও বলেছিল একদিনের জন্য হলেও রিফাতের বউ হতে চায়, সহ্য করতে পারিনি ওর এসব ভালোবাসা। তাই বিয়ের দিন ওর পানির গ্লাসে বিষ মিশিয়ে রাখি আর নিলা সে পানি খেয়ে মারা যায়। কেউ বুঝতেও পারেনি নিলাকে যে আমি খুন করেছি, সবাই ভেবেছিল নিলা সুইসাইড করেছে। কিন্তু এতো বছর পর….
আমি: আমিও বুঝতে পারিনি, ওই যে সোফায় বসা মেয়েটাকে দেখছিস যাকে তুই গাড়ি চাপা দিয়ে মারতে চেয়েছিলি সেই সবকিছু বের করেছে আর তুই যে আসল খুনি….
আরোহী: গাড়ি চাপা দিয়েছিলাম ও মরেনি কিন্তু এখন তো ওকে আমি মেরেই ফেলবো (আরোহী আলিফার দিকে এগিয়ে গেলো, ওর হাত ধরে টান দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিলাম)
আমি: আমার এক কলিজা মেরেছিস আরেক কলিজায় হাত দেয়ার ফল এখন পাবি
নীলিমা: ভাইয়া কি করছ চাকু আনছ কেন
আলিফা: রিফাত ও খুব খারাপ মেয়ে যেও না ওর কাছে (চাকু নিয়ে আরোহীর কাছে যেতেই প্রিতি এসে সামনে দাঁড়ালো)
প্রিতি: পাগল হয়ে গেছ ওর মতো মেয়েকে খুন করে জেলে যাবা নাকি। আর নীলিমা আপু এই ফল কাটার চাকুটা এখানে রেখেছিলে কেন
নীলিমা: আমি জানতাম নাকি ভাইয়া এমন করবে
রিয়ান: ভাইয়া সরে এসো পুলিশ এসেছে আরোহীর ব্যবস্থা এখন ওরাই করবে (সরে এসে দাঁড়ালাম, পুলিশ আরোহীকে এরেস্ট করলো)
আমি: রিয়ান পুলিশ আনতে গেলি কেন ওকে খুন করা উচিত ছিল
প্রিতি: হ্যাঁ করো খুন করে জেলে চলে যাও আর আমরা কেঁদে মরি
আব্বু: প্রিতি তুই হোস্টেল থেকে আসতে গেলি কেন
প্রিতি: ভাগ্যিস নীলিমা আপু ফোন করে সব বলেছিল তাই এসেছি
আব্বু: আরোহীকে নিয়ে যান আপনারা
পুলিশ: আপনারা চিন্তা করবেন না ওর ব্যবস্থা আমরা ভালো করেই করবো
আরোহী: নীলিমা তোকে তো আমি ছাড়বো না তোকে আমি…(রিয়ান গিয়ে কয়েকটা থাপ্পড় দিলো)
রিয়ান: আগে জেলে গিয়ে ফাসির দিন গুন তারপর মরে ভূত হয়ে আসিস নীলিমার ক্ষতি করতে।
পুলিশ আরোহীকে নিয়ে চলে গেলো। বাসার সবাই কাঁদছে, ছোটমা বার বার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন।
রিয়ান: ভাইয়া ভাবিকে এখান থেকে নিয়ে যাও
আমি: হুম।

আলিফাকে রুমে এনে শুয়ে দিলাম। কিছু ভালো লাগছে না তাই বারান্দার দিকে পা বাড়ালাম।
আলিফা: রিফাত
আমি: আলিফা আমি একটু সময় একা থাকতে চাই প্লিজ
আলিফা: হুম।

নিলার ছবিটা বুকে জরিয়ে ধরে বারান্দায় বসে আছি। বাসার সবাই তো কাঁদছে কিন্তু আমার কান্না পাচ্ছে না কেন। বরং আজ শান্তি লাগছে নিলার খুনিকে শাস্তি দিতে পেরেছি এইটা ভেবে। নিলার ছবিটার দিকে তাকালাম। আজ ওকে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে “তুই একদিনের জন্য হলেও আমার বউ হতে চেয়েছিলি আর আমি কিনা তোকে আগলে রাখতে পারিনি, আমায় মাফ করে দিস পাগলী”

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে