শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ১৭

0
1880

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ১৭

লেখিকা: সুলতানা তমা

আলিফাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ওর ঠোঁটে আমার ঠোঁট ডুবিয়ে দিলাম। আলিফা আজ কোনো রাগ দেখাচ্ছে না বাধাও দিচ্ছে না, চোখ দুটু বন্ধ করে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে….

হঠাৎ আমার ফোন বেজে উঠলো আলিফা তাড়াতাড়ি আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। উফফফ ফোনটা আসার আর সময় পেলো না। ফোন হাতে নিয়ে দেখি ছোটমা, অন্য কেউ হলে এখন….
আমি: হ্যালো ছোটমা
ছোটমা: হ্যাঁ কেমন আছিস
আমি: এইতো ভালো
ছোটমা: আমার আলিফা মা কেমন আছে
আমি: আচ্ছা ছোটমা একটা সত্যি কথা বলতো
ছোটমা: কি
আমি: তোমার কি তিনটা মেয়ে ছিল আর ছোটবেলায় একটা হারিয়ে গিয়েছিল, না মানে সিনেমায় তো এমনটা হয়
ছোটমা: ফাজি ছেলে কি বলছিস এসব আমার তো দুটুই মেয়ে
আমি: তাহলে নিলার সাথে আলিফার সবকিছু মিলে যায় কিভাবে, আমার তো মাঝে মাঝে মনে হয় নিলা আর আলিফা দুবোন
ছোটমা: এইটা হয়তো প্রকৃতিরই খেলা, তোর থেকে এক নিলাকে কেড়ে নিয়ে আরেক নিলাকে দিয়েছে (আলিফার দিকে তাকালাম ও আমার দিকে তাকিয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে জিজ্ঞেস করছে কি)
ছোটমা: কিরে কি হলো
আমি: ছোটমা এইটা যদি প্রকৃতিরই খেলা হবে তাহলে বলতে পারো আলিফা আমাকে মেনে নিতে পারছে না কেন
ছোটমা: আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে দেখিস, আসলে বিয়েটা হুট করে হয়েছে তো মেয়েটা মেনে নিতে পারছে না আর অন্য কাউকে ভালোবাসে যেহেতু একটু তো সময় লাগবেই
আমি: আর কতো সময় লাগবে সাতটা মাস পেরিয়ে গেলো আলিফার মধ্যে কোনো পরিবর্তন নেই
ছোটমা: পরিবর্তন হয়েছে তো সেটা তুই নিজেও বুঝতে পারছিস কিন্তু মানতে চাইছিস না কারণ তুই চাইছিস আলিফা পুরোপুরি তোর হয়ে যাক। বুঝার চেষ্টা কর ভালোবাসা ভুলা এতো সহজ না মেয়েটার সময় প্রয়োজন। যতোটুক সময় লাগে তুই দে ধৈর্য হারা হবি না
আমি: হুম
ছোটমা: আলিফার কাছে ফোনটা দেতো
আমি: হুম

আলিফা ছোটমার সাথে কথা বলে এসে আমার পাশে বসলো, ফোনটা হাতে নিয়ে চটপট করছে।
আমি: কি হয়েছে
আলিফা: রাতুলকে আবার ফোন করে দেখি
আমি: ওকে।
আলিফা যেন আমার মুখ থেকে ওকে শব্দটাই শুনতে চাইছিল, খুশি হয়ে সাথে সাথে ফোন দিলো। আমি মানা করবো কেন দোষ তো আমারি এভাবে হুট করে বিয়ে করে মেয়েটার জীবন উলটপালট করে দিলাম। আজ মেয়েটা দুটানায় ভোগছে শুধুমাত্র আমার জন্য।
আলিফা: ফোনটা এখনো বন্ধ (আলিফার কথায় ওর দিকে তাকালাম মন খারাপ করে বসে আছে)
আমি: মন খারাপ করো না বার বার ট্রাই করে দেখো একবার নিশ্চয় ওকে পাবে
আলিফা: হুম

আলিফা মন খারাপ করে রুমে বসে আছে আর আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। আলিফার সামনে থেকে ওর মন খারাপ দেখতে পারবো না তাই দূরে চলে এসেছি। আমি তো বুঝতে পারছি আলিফা আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে কিন্তু রাতুলের প্রতি ওর যে ভালোবাসা ছিল মায়া ছিল ও এসব ভুলতে পারছে না। কিন্তু আমি রাতুলকে ভুলাবো কিভাবে আমি তো ওকে নিজের থেকে বেশি ভালোবাসি এর চেয়ে বেশি ভালোবাসা যায় কিনা আমার জানা নেই, তারপরও যদি আলিফা রাতুলকে না ভুলতে পারে আমার কি করার আছে। আচ্ছা রাতুলকে না ভুলাতে পারি অন্তত ওর মন তো ভালো করে দিতে পারি কিন্তু কিভাবে ভালো করবো। একটা রাস্তা আছে আলিফা রাজি হয় কিনা দেখি।

আলিফার সামনে এসে পায়চারী করছি কিন্তু বলার সাহস পাচ্ছি না।
আলিফা: কিছু বলবে
আমি: আমি যে কিছু বলতে চাই তুমি বুঝলে কি করে
আলিফা: মনে হলো তাই জিজ্ঞেস করলাম
আমি: দেখেছ তুমি আমাকে ভালোবাস তাই তো সবসময় আমি বলার আগেই তুমি আমার মনের কথা বুঝে যাও
আলিফা: কচু ভালোবাসি
আমি: তোমার তো ঘুরতে ভালো লাগে চলো শপিং করতে যাই
আলিফা: হঠাৎ শপিং
আমি: না মানে তোমার জন্য ফোন কিনা হয়ে যাবে সাথে তোমার মনও ভালো হবে
আলিফা: (আমার দিকে তাকিয়ে আছে)
আমি: কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছ কেন, প্লিজ চলো না তোমার জ্বরও তো কমেছে
আলিফা: ওকে যাবো
আমি: সত্যি
আলিফা: না মিথ্যা
আমি: তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও
আলিফা: ওকে।

ড্রয়িংরুমে বসে আলিফার জন্য অপেক্ষা করছি, রাগিণী আসার নামই নেই আজ মনে হয় সাজতে সাজতে ও রাগিণী থেকে পরী হয়ে যাচ্ছে হিহিহি।
আলিফা: এই ভূতের মতো একা একা হাসছ কেন (আলিফার দিকে তাকিয়ে আছি এতোক্ষণ ও কি করলো এটাই ভেবে পাচ্ছি না, একদম সাজেনি শুধু শাড়িটা চেঞ্জ করেছে আর চুলগুলো খোপা করেছে কিন্তু তাতেই রাগিণীকে অনেক সুন্দর লাগছে)
আলিফা: হা করে তাকিয়ে থাকবে নাকি যাবে
আমি: চলো।

গাড়িতে উঠতে যাবো আলিফা চেঁচিয়ে বললো
আলিফা: আমি তো গাড়িতে যাবো না
আমি: আরে বাবা আস্তে বলো
আলিফা: হুম আমি গাড়িতে যাবো না
আমি: কেন
আলিফা: আমি রিকশা করে যাবো
আমি: রিকশা
আলিফা: হ্যাঁ অবাক হচ্ছ কেন
আমি: এমনি দাঁড়াও রিকশা পাই কিনা দেখি
আলিফা: ওকে।

রিকশাতে বসে আছি আলিফা আমার কাধে মাথা রেখে আমার হাত ধরে রেখেছে। এখন বুঝেছি এজন্যই আলিফা রিকশাতে আসতে চেয়েছিল।
আলিফা: এভাবে তাকিয়ে আছ কেন
আমি: আমি না তোমার মন একদম বুঝতে পারিনা, হঠাৎ আমাকে ভালোবাস হঠাৎ আবার….
আলিফা: রিফাত এখন এসব বাদ দাও না
আমি: সবসময় তো বাদ দিয়েই যাচ্ছি আর কতো
আলিফা: আমি কিন্তু রিকশা থেকে নেমে যাবো
আমি: এই না না কান ধরেছি আর বলবো না।
আলিফা: (নিশ্চুপ)
আলিফাকে জরিয়ে ধরলাম তারপর কপালে আলতো করে একটা চুমু দিলাম।
আলিফা: এই রাস্তার মধ্যে
আমি: প্লিজ এবার অন্তত হাসো। (আলিফা ফিক করে হেসে দিয়ে আমাকে জরিয়ে ধরলো)

আলিফার জন্য ফোন দেখছি ও মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি: কি হয়েছে
আলিফা: আমার ফোন লাগবে না
আমি: কেন
আলিফা: রাতুলের ফোন তো সবসময় বন্ধ পাই আমি আর ফোন কিনে কি করবো (রাগটা এখন আর কন্ট্রোল করতে পারছি না, রাতুলের ফোন বন্ধ থাকে তাই ফোন কিনবে না। ওর কথায় মনে হচ্ছে রাতুলকে ফোন দেওয়া ছাড়া দুনিয়ায় আর কাউকে ফোন দেওয়ার নেই, আরে আমি যখন অফিসে থাকি তখনো তো ফোন দিতে পারে)
আমি: লাগবে না যেহেতু চলো (ওর হাত শক্ত করে চেপে ধরলাম)
আলিফা: রিফাত কি করছ লাগছে আমার ছাড়ো
আমি: (নিশ্চুপ)
আলিফা: রিফাত আমার হাতে লাগছে প্লিজ ছাড়ো
আমি: হুম ফোন যেহেতু লাগবে না শাড়ি কিনো
আলিফা: আমার শাড়িও লাগবে না
আমি: কেন রাতুল নেই বলে নতুন শাড়িও লাগবে না, ওহ বুঝেছি নতুন শাড়ি পরে কাকে দেখাবে রাতুল ছাড়া তো তোমাকে দেখার আর কেউ নেই
আলিফা: রিফাত
আমি: যা যা পছন্দ হয় কিনো আমি আসছি
আলিফা: আমাকে একা রেখে কোথায় যাচ্ছ।
আলিফার কথার উত্তর না দিয়ে চলে আসলাম। ওয়াশরুমে এসে চোখেমুখে পানির ঝাপটা দিলাম, যা রাগ হয়েছিল আলিফা যদি আজ বাসায় এমন করতো তাহলে হয়তো থাপ্পড় কয়েকটা দিয়ে দিতাম।

আলিফার কাছে এসে দেখি অনেক কিছু কিনেছে, আমাকে দেখেই একটা হাসি দিলো।
আমি: কিনা শেষ
আলিফা: হুম টাকা দিয়ে আসো বাসায় যাবো
আমি: হুম।

ইচ্ছে ছিল আজ সারাদিন ঘুরবো কিন্তু আলিফা বাসায় চলে যেতে চাইছে তাই আর কিছু বললাম না। শপিংমল থেকে বেরিয়ে পড়বো এমন সময় আলিফা দাঁড়িয়ে গেলো।
আমি: কি হলো দাঁড়িয়ে পড়লে কেন
আলিফা: রিফাত আমি রাতুলকে দেখেছি
আমি: মানে কোথায়
আলিফা: এইতো ভিতরে ঢুকলো
আমি: তুমি এখানে দাঁড়াও আমি দেখে আসছি
আলিফা: তুমি ওকে ছিনো নাকি আমিও সাথে যাই
আমি: তোমার ফোনে রাতুলের পিক দেখেছিলাম দেখলে ছিনতে পারবো, তুমি এখানেই দাঁড়াও আমি আসছি।

সারা শপিংমল খুঁজলাম কিন্তু রাতুলকে তো পেলাম না তাহলে কি আলিফা ভুল দেখেছে। আলিফাকে গিয়ে কি জবাব দিবো ও তো মানিতেই চাইবে না ও যে ভুল দেখেছে।

আলিফার সামনে এসে দাঁড়ালাম।
আলিফা: পেয়েছ
আমি: না আমি তো অনেক খুঁজলাম কোথাও পাইনি তুমি মনে হয় ভুল দেখেছ
আলিফা: ভুল
আমি: প্লিজ কেঁদো না বাসায় চলো
আলিফা: হুম

বাসায় এসে আলিফা কারো সাথে কোনো কথা বললো না সারাটা রাস্তা কাঁদতে কাঁদতে এসেছে। আলিফা কি সত্যি রাতুলকে দেখেছে, তাহলে কি রাতুল ফিরে এসেছে…?

রুমে এসে দেখি শপিং এর ব্যাগ গুলো এলোমেলো হয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে আলিফা বারান্দায় দাঁড়িয়ে কাঁদছে। আমি এখন কি করবো কি করা উচিত কিছুই বুঝতে পারছি না।

সন্ধ্যা নেমে এসেছে আলিফা এখনো বারান্দায় দাঁড়িয়ে কাঁদছে। ওর পাশে এসে দাঁড়ালাম।
আমি: আলিফা প্লিজ আর কেঁদো না আমি কাল আবার রাতুলকে খুঁজতে যাবো
আলিফা: শপিং এর ব্যাগ গুলো খুলে যার যেটা তাকে সেটা দিয়ে আসো
আমি: যার যেটা মানে
আলিফা: দেখো গিয়ে তাহলেই বুঝতে পারবে, আর কালো পাঞ্জাবীটা তোমার
আলিফা: তুমি কি সবার জন্য শপিং করেছ
আলিফা: হুম
আমি: তাহলে তুমি নিজের হাতে দিয়ে আসো
আলিফা: ভালো লাগছে না তুমি যাও
আমি: হুম।

ব্যাগ গুলো নিয়ে ড্রয়িংরুমে আসলাম। প্রিতি সবকিছু খুলে দেখছে। আব্বুর জন্য পাঞ্জাবী, রিয়ানের জন্য টিশার্ট, প্রিতির জন্য লেহেঙ্গা অথচ আলিফার জন্য কিছুই না।
প্রিতি: ভাবি তো নিজের জন্য কিছুই কিনে নি
আমি: আমারই ভুল ওখানে দেখতাম কি কি কিনেছে
প্রিতি: মন খারাপ করো না আবার ভাবিকে নিয়ে যাবে সমস্যা কি
আমি: হুম।

রুমে আসলাম আলিফাকে জিজ্ঞেস করতে নিজের জন্য কিছু কিনে নি কেন, কিন্তু ও তো রুমে বা বারান্দায় কোথাও নেই। গেলো কোথায় নিচে নয়তো, প্রিতি আর আমি তো ড্রয়িংরুমে ছিলাম নিচে গেলে তো আমরা দেখতাম। তাড়াতাড়ি নিচে গেলাম কিন্তু কোথাও পাচ্ছি না।
আমি: প্রিতি প্রিতি
প্রিতি: কি হয়েছে ভাইয়া
আমি: তোর ভাবিকে দেখেছিস
প্রিতি: নাতো আমি তো এতোক্ষণ তোমার কাছেই ছিলাম।
দৌড়ে আব্বুর রুমে গেলাম আব্বুর রুমেও নেই, এই সন্ধ্যা বেলায় যাবে কোথায় ও। আচ্ছা ছাদে যায়নি তো।

তাড়াতাড়ি ছাদে আসলাম। ছাদের চারিদিকে চোখ বুলাচ্ছি কোথাও তো নেই, হঠাৎ ছাদের এক কোণায় চোখ পড়লো আলিফা ছাদের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে। আজব মেয়ে তো বাসর রাতে সুইসাইড এর ভয় দেখিয়েছিল আর আজ সত্যি সত্যি সুইসাইড করতে চলে এলো। আরে রাতুলকে একবার দেখেছে মাত্র খুঁজে এনে দিবো বলেছি তারপরও সুইসাইড করতে চলে এলো। দৌড়ে আলিফার কাছে যাচ্ছি মনে হচ্ছে ও এখনি লাফ দিবে, জোরে একটা চিৎকার দিলাম আলিফা….

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে