জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ৪

0
2814

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ৪

লেখিকা: সুলতানা তমা

 

–আমি বলিনি আব্বু কিভাবে যেন দেখে ফেলছেন
–হইছে আর মিথ্যে বলতে হবে না, ঘরে অশান্তি আনার জন্যই তো বলছিস
–আম্মু বিশ্বাস করো আমি বলিনি
–তুই আজকে থেকে আমাকে আম্মু ডাকবি না, অলক্ষী মেয়ে নিজের মাকে তো অল্প বয়সেই খেয়েছিস এখন আমার সংসারে আগুন লাগাতে চাস
–আম্মু এসব কি বলছ
–ভালো করে শুনে রাখ এখানে থাকতে হলে কাজ করে খেতে হবে এতো বসিয়ে খাওয়াতে পারবো না আর যদি ভেবে থাকিস সব বাবাকে বলে দিবি তাহলে ভুল করবি দুইটা কে ছেড়ে চলে যাবো
–হুম
–যা কাজ কর গিয়ে কোনো ভুল হলে খবর আছে

রান্না করতে আসলাম পুরা হাত নিয়ে কিভাবে রান্না করবো জানিনা তাও করতে হবে আমার যে আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই এখানেই থাকতে হবে, অনেক কষ্ট করে রান্না করলাম জানিনা কেমন হয়েছে, আম্মু খেতে বসলো তুলিকে নিয়ে আর আমাকে বললো
–এখন থেকে আমাদের খাওয়া শেষ হলে পর যা থাকে তুই খাবি আর তোর আব্বু আসলে একসাথে খাবি ও যেন কিছু বুঝতে না পারে
–হুম
–এসব কি রান্না করেছিস তরকারীতে লবন বেশি কেন (আমার উপরে তরকারি ছুড়ে মারলো)
–প্রথম তো রান্না করেছি তাই লবন বেশি হয়ে গেছে
–আর যেন এমন না হয়
–হুম

সারা শরীরে তরকারী লেগে আছে তাই এই রাতের বেলা গোসল করতে হলো, গোসল করে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম

রাতে অনেক জ্বর উঠলো তাই সকালে উঠতে দেরি হয়ে গেছে আম্মু এসে ডাক দিল
–নবাবজাদীর ঘুম কি এখনো শেষ হয়নি নাস্তা বানাবে কে
–আম্মু আমার খুব জ্বর আজ নাস্তাটা তুমি বানিয়ে নাও
–এই অলক্ষী মুখে আবার আমাকে মা ডাকলে তোর জিহ্বায় আগুন লাগিয়ে দিবো আর জ্বর টর বুঝি না এখনি নাস্তা বানিয়ে দে
–হুম

নাস্তা বানিয়ে দিলাম ওরা খেয়ে চলে গেলো যা বাকি ছিল আমি খেয়ে নিলাম, ছাদে বসে আছি আম্মু ফোন দিল
— শুন আজ আমার এক বন্ধু আর তার স্ত্রী আসবে ঘর ভালো করে পরিষ্কার করে রাখবি আমি একটু পর এসে রান্না করবো তোর রান্না তো মুখেও দেয়া যায় না
–হুম

ফোন রেখে সবকিছু পরিষ্কার করলাম ফ্লোর মুছতে খুব কষ্ট হলো জীবনে কখনো করিনি হাতটা ও এখনো কমেনি, এই সময় আম্মু আসলো এখন আম্মু ডাকতে খুব ভয় হয়, আম্মু এসে রান্না শুরু করলো আর আমাকে থালা বাসুন ধুতে বললো, বাসুন ধুতে গিয়ে হাত ফচকে একটা পড়ে গিয়ে ভেঙ্গে গেলো
–হায় হায়রে এই অলক্ষী রে নিয়া আমি কি করি এতো দামী বাসুনটা ভেঙ্গে ফেলছে
–আমি ইচ্ছে করে ফেলিনি হাত ফচকে পড়ে গেছে
–দারা আর যেন কোনো দিন হাত ফচকে না পড়ে সেই ব্যবস্থা করে দিচ্ছি
–মাগো (বাসুনের একটা টুকরা দিয়ে হাত কেটে দিল)
–একদম চিৎকার করবি না আর আমার বন্ধুর সামনে আসবি না

হাত দিয়ে অনেক রক্ত ঝরছে কোনো ভাবে বিছানায় গিয়েই অজ্ঞান হয়ে গেলাম, কতক্ষণ পর জ্ঞান ফিরেছে জানিনা উঠে দেখি এভাবেই পড়ে আছি রক্ত পড়াটা বন্ধ হয়েছে, রোম থেকে বেরিয়ে দেখি আম্মু উনার বন্ধুদের নিয়ে অনেক হাসাহাসি করছে তাই ছাদে চলে গেলাম ছাদে বসেই সারাদিন কাটিয়ে দিলাম সন্ধ্যায় আম্মু এসে রান্না করতে বললো, হাত নিয়ে খুব কষ্ট করে রান্না করলাম আজ আর লবন দিতে ভুল করিনি খুব সাবধানে রান্না করেছি তরকারী উপরে ছুড়ে মারবে এই ভয়ে, রাতে আম্মু খাওয়ার পর আমি খেলাম রোমে এসে দেখি আব্বুর ফোন
–কেমন আছো আব্বু
–ভালো তোর কন্ঠ এমন শুনাচ্ছে কেন
–ঠিকি তো আছে
–আমি আসার পর কি তোর আম্মু তোকে কিছু বলছে
–কই নাতো
–তোর হাত পুরা নিয়ে ঝগড়া হইছিল তাই ভয় হচ্ছিল তোর সাথে না আবার ঝগড়া করে
–না ঝগড়া করেনি (করছে তো ঠিকি)
–এই মাসে আর আসা হবে না কাজের চাপ বেশি একটু সাবধানে থাকিস আর কোনো সমস্যা হলে আমাকে জানাবি
–আচ্ছা তুমি চিন্তা করো না
–আচ্ছা রাখি

ফোন রেখে ভাবছি এই মাসে না আসাটাই ভালো হাত কাটার দাগটা ততো দিনে মিটে যাবে, হাতটা ব্যাথা করছে জ্বর ও কমেনি ঘুমিয়ে পড়লাম
আম্মু আর আমি একটা সবুজ মাঠে পাশাপাশি হাটছি আম্মু আমার হাতটা খুব শক্ত করে ধরে রাখছেন ছাড়লেই যেন আমি হারিয়ে যাবো
–আম্মু আমাকে একা রেখে কেন চলে গেলে আমাকে সাথে নিয়ে গেলেই তো আজ এতো অত্যাচার সহ্য করতে হতো না
–আর সহ্য করতে হবে না মা তোকে আমার কাছে নিয়ে যাচ্ছি
–কিন্তু আব্বু তো একা হয়ে যাবে আমি চলে গেলে
–তোর আব্বুকেও আমাদের কাছে নিয়ে আসবো
–হ্যা এটাই ভালো হবে আমরা আবার এক হবো আমাদের সুন্দর একটা সংসার হবে আব্বু রাজা তুমি রানী আর আমি তোমাদের রাজকন্যা হবো
–হ্যা মা তোকে আর কষ্ট পেতে হবে না
হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলো আমার সারা শরীর ঘামতেছে তারমানে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম, ঘড়িতে থাকিয়ে দেখি ১০টা বেজে গেছে আব্বুকে ফোন দিলাম
–আব্বু কি করো
–কিরে তোকে এতো অস্থির লাগছে কেন
–আম্মুকে স্বপ্নে দেখছি
–হুম যা ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নে
–আচ্ছা (দূর আব্বুর মনটা খারাপ করে দিলাম)

নাস্তা করে কপি নিয়ে ছাদে গেলাম, বসে আছি আর আম্মুর কথা ভাবতেছি স্বপ্নের মতো যদি সত্যি আম্মু আমাকে আম্মুর কাছে নিয়ে যেতো অনেক ভালো হতো এতো অত্যাচার সহ্য করতে হতো না কারো বোঝা হয়ে থাকতে হতো না, আচ্ছা নতুন আম্মু এতো পাল্টে গেলো কেন উনার মেয়ে তুলি আছে বলে আমিও তো উনার মেয়ে হয়তো তুলি আর আমার মা দুইজন কিন্তু বাবা তো একজনই তাহলে আমাকে নিজের মেয়ে ভাবলে কি হয় একটু মায়ের ভালোবাসাই তো চাই অন্য কিছু তো না, আল্লাহ হয়তো আমার কপালে মায়ের ভালোবাসা লিখে দেননি তাই তো ছোট বেলায় মাকে হারিয়েছি যাকে নতুন মা করে আনলাম সেও পাল্টে গেলো

এভাবেই কেটে গেলো তিন মাস আজ আমার রেজাল্ট দিবে অথচ আব্বু বাসায় নেই, এখন আমি সব কাজ পারি অনেক রান্না পারি একদম কাজের বুয়ার মতো, কাজ করতে করতে অভ্যাস হয়ে গেছে এখন আর কাজ করতে বিরক্ত লাগে না কষ্ট হয় না, দুপুরের দিকে রেজাল্ট পেলাম আলহামদুলিল্লাহ্‌ অনেক ভালো রেজাল্ট করেছি কিন্তু খুব কষ্ট হচ্ছে আম্মু নাই এই খুশির দিনে, আব্বু ফোন দিয়ে বললেন রাতে আসবেন

রাতে আব্বু আসলেন অনেক গুলো মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে আম্মু তো দেখেই রেগে গেছে
–এতো মিষ্টি কে খাবে
–আমার মেয়ে ভালো রেজাল্ট করেছে প্রতিবেশীদের খাওয়াতে হবে না
–আহ্লাদ দেখে বাচি না শুধু শুধু টাকা নষ্ট
–টাকা তো তুমি রোজগার করো না তো এতো চেঁচামেচি করো কেন
–এখন তো আমার কথা চেঁচামেচি মনে হবেই একদিন বুঝবা

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে