জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ২৩

0
2100

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ২৩

লেখিকা: সুলতানা তমা

 

–তার মানে আমাকে বিশ্বাস করতে পারছ না
–ঠিক তা না আসলে ছয়মাস অনেক সময় তোমার মন তো পাল্টেও যেতে পারে
–শুন নিজের মন ঠিক রাখ আমার মন নিয়ে চিন্তা করতে হবে না আমি শ্রাবনকে ভালবাসি তুমি চাইলেও আমি তোমার সাথে সংসার করবো না
–রেগে যাচ্ছ কেন
–(নিশ্চুপ)
–কি কথা বলবা না আর

আর একটা কথাও বলিনি আমি চাচ্ছি ওদের মিলিয়ে দিতে আর ওরা আমাকে বিশ্বাসই করে না, গাড়ি একটু পর একটা রেস্টুরেন্ট এর সামনে থামল, গাড়ি থেকে নেমে আকাশকে অনুসরণ করে রেস্টুরেন্ট এর ভিতরে ঢুকলাম, আকাশ একটা টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়াল একটা মেয়ে বসে আছে আর আকাশের দিকে রাগি চোখে থাকিয়ে আছে বুঝলাম এটাই মেঘা কিন্তু এতো রেগে আছে কেন

আকাশ: মেঘা ও হচ্ছে তমা আর তমা ও হচ্ছে আমার জান মেঘা
আমি: কেমন আছেন আপু
মেঘা: ভালো তুমি
আমি: ভালো
মেঘা: দাড়িয়ে আছ কেন বস

আকাশ গিয়ে মেঘার পাশে বসলো আর আমি তাদের সামনের একটা চেয়ারে বসলাম, মেঘা মেয়েটা দেখতে অনেক সুন্দর বুঝলাম না কোন লাভে রাকিব লুইচ্ছা টা আমাকে আকাশের বউ করে আনলো মেঘা আর আকাশকে কতো সুন্দর মানাইত
আকাশ: মেঘা এখনো রেগে আছ (আকাশের কথায় ওদের দিকে থাকালাম)
মেঘা: (নিশ্চুপ)
আকাশ: প্লিজ বুঝছ না কেন আমি মজা করে কথাটা বলছিলাম
মেঘা: মজা করে না ছাই আসলে তুমি ওর প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছ (রাগি কন্ঠে বললো)
আকাশ: বিশ্বাস কর আমি মজা করেছিলাম শুধু তোমাকে রাগাতে কিন্তু তুমি যে এতো রেগে যাবা বুঝতে পারিনি
মেঘা: এমন কথা কেউ মজা করে বলে না আকাশ আমাকে এতো বোকা ভেবো না (বুঝলাম না ওরা কি নিয়ে ঝগড়া করতেছে জিজ্ঞেস করবো, জিজ্ঞেস করা কি ঠিক হবে)
আকাশ: আচ্ছা তুমি তমা কে জিজ্ঞেস কর আমি এমনটা চাই কি না
আমি: আমি কি জানতে পারি কি হয়েছে
আকাশ: আমি মেঘা কে মজা করে বলছিলাম ওকে বিয়ে করবো না আর তোমাকেও ডিভোর্স দিব না তাই মহারাণী রেগে আছে
আমি: এইটা তো রাগ করার কথাই এমন মজা কেন করবা
আকাশ: তুমিও আমাকে ভুল বুঝছ আরে আমি মজা করে বলছিলাম
মেঘা: আসলে তুমি ওর প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছ নাহলে তুমি করে কথা বলতেছ কেন
আকাশ: মেঘা প্লিজ
আমি: আপু প্লিজ এমন কথা বলবেন না আমরা দুজন ফ্রেন্ড তাই তুমি করে কথা বলি আর টেনশন নিবেন না আমি আপনাদের মিলিয়ে দিব আমার উপর বিশ্বাস রাখুন
মেঘা: তোমার উপর বিশ্বাস আছে কিন্তু আকাশের উপর নেই
আকাশ: কি (রাগি কন্ঠে)
আমি: আপু যেখানে বিশ্বাস নেই সেখানে সম্পর্ক কোনো ভাবেই ঠিকানো সম্ভব না, একটা সম্পর্ক ঠিকিয়ে রাখতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন একে অপরের প্রতি বিশ্বাস, আপনি যদি ওকে বিশ্বাসই না করেন তাহলে বিয়ে তো দূরের কথা রিলেশন টাই ভেঙ্গে যাবে
মেঘা: আমি ওকে হারাতে চাই না খুব বেশি ভালবাসি ওকে
আমি: তাহলে এতো অবিশ্বাস করেন কেন
মেঘা: ওর কথা শুনে
আকাশ: বললাম তো মজা করেছি আচ্ছা সরি আর কখনো এমন মজা করবো না এইযে কান ধরলাম এবার খুশি তো
মেঘা: হুম
আকাশ: এবার বলো তোমরা দুজন কি খাবা
মেঘা: তোমার ইচ্ছেতেই অর্ডার দাও
আকাশ: তমা তুমি কি খাবা
আমি: তোমরা যা খাও তাই
আকাশ: ঠিক আছে (ওয়েটার কে ডেকে খাবার অর্ডার দিল)
মেঘা: আচ্ছা তমা বলোনি তো কেন তুমি আমাদের মিলিয়ে দিতে চাচ্ছ কোন মেয়ে কি নিজের স্বামী কে অন্য মেয়ের হাতে তুলে দেয়
আমি: আপু আমি জানি ভালবাসার মানুষকে ছাড়া বেঁচে থাকার যন্ত্রণা কতটুকু আমি চাই না আমার মতো আর কেউ এই কষ্ট ভোগোক, আমরা শুধু কাগজে কলমে স্বামী স্ত্রী আমি ভালবাসি শ্রাবনকে আর আকাশ ভালবাসে আপনাকে আমরা কখনো সুখী হতে পারবো না আর আপনি ভালবাসেন আকাশকে এখন যদি আপনার অন্য কারো সাথে বিয়ে হয় আপনিও সুখী হবেন না যার সাথে বিয়ে হবে সেও সুখী হবে না কাজেই চারটা জীবন নষ্ট হবে, কি দরকার চারটা জীবন নষ্ট করার তার চেয়ে ভালো হবে আপনাদের বিয়ে হলে
মেঘা: হুম তা ঠিক চারটা জীবন নষ্ট হবে কিন্তু ডিভোর্স এর পর তুমি কি করবা
আমি: ভালবাসা যেহেতু হারিয়েছি কোনো ভাবে জীবনটা পার করে দিব
মেঘা: আচ্ছা যাকে ভালোবাস সে এখন কোথায়
আমি: জানিনা কোনো যোগাযোগ নেই
মেঘা: কেন কি হয়েছিল তোমাদের মাঝে
আকাশ: মেঘা আমি সব জানি তোমাকে সব বলবো এখন ওর মন খারাপ করিও না
মেঘা: হুম
আমি: আর একটা কথা ছয়মাস খুব বেশি সময় না দেখতে দেখতে চলে যাবে এই সময় নিয়ে টেনশন করবেন না আর প্লিজ আমাদের উপর বিশ্বাস রাখুন
মেঘা: ঠিক আছে

আরো কিছু সময় রেস্টুরেন্টে বসে প্রায় সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরলাম

রাতে মা বলে দিলেন আগামীকাল আমাদের বাসায় যাবো আকাশ যেন অফিসে না যায়, আমি বাবার বাড়িতে যাবো শুনে ঠিক যতোটা খুশি হয়েছি আকাশ ততোটাই খুশি হয়েছে অফিসে যেতে হবে না শুনে কারন ও রাকিব লুইচ্ছার ব্যবসা একদম দেখাশুনা করতে চায় না ঠেকায় পরে একটু সময়ের জন্য অফিসে গিয়ে বসে, রাতে ব্যাগ গুছিয়ে রেখে ঘুমাতে গেলাম মন অনেক ভালো কারন সকালেই বাড়িতে যাবো মনে হচ্ছে কতো বছর ধরে বাড়িতে যাই না আব্বুকে দেখি না তুলিটা কে দেখি না আর আম্মু উনার কারনে যেতে মন চায় না কে জানে আবার অত্যাচার শুরু করে দিতে পারে

সকালে আব্বুর ফোনে ঘুম ভাঙ্গলো রিসিভ করলাম
–হ্যালো আব্বু
–কেমন আছিস মা
–ভালো তুমি
–ভালো কখন আসবি তোরা
–এইতো ১১টার দিকে
–ঠিক আছে সাবধানে আসিস
–আচ্ছা

সকালে নাস্তা করে রেডি হয়ে নিলাম, মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিলাম রাকিব লুইচ্ছাও বাসায় তার কাছ থেকেও বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠলাম, গাড়িতে উঠেই রিয়া কে ফোন দিয়ে বললাম আমাদের বাসায় আসতে, একটু পর আকাশের ফোন বেজে উঠলো কিন্তু রিসিভ করছে না
আমি: কি হলো ফোন রিসিভ করছ না কেন
আকাশ: মেঘা ফোন দিছে রিসিভ করলেই অনেক গুলো প্রশ্ন করবে কেন তোমাদের বাসায় যাচ্ছি তা নিয়ে
আমি: রিসিভ কর কোনো প্রশ্ন করলে আমার কাছে দিও আমি কথা বলবো
আকাশ: ঠিক আছে (ফোন রিসিভ করতেই মেঘা কি যেন বললো তাই আমার কাছে দিয়ে দিল)
আমি: হ্যালো আপু
মেঘা: ও ফোন তোমার কাছে দিল কেন
–ড্রাইভ করছে তো তাই
–তোমরা কোথায় যাচ্ছ
–আমাদের বাসায়
–কেন
–নিয়ম অনুযায়ী যেতে হয়
–ও যাবে কেন
–নিয়ম কি আমি একা পালন করবো নাকি
–তুমি না গেলেই তো হত ওকে ও যেতে হত না
–আপনার বিয়ে হলে পর বুঝবেন বাবার বাড়ি ছেড়ে শশুড় বাড়িতে থাকা কতো কষ্টের, মন কতটা ব্যাকুল হয় একবার বড়িতে যাবার জন্য

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে