জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ১৩

0
2084

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ১৩

লেখিকা: সুলতানা তমা

 

–তোমাদের জন্যই আমি আজ বেঁচে আছি
–আমরা তো উচিলা মাত্র বেঁচে আছেন তো আল্লাহর ইচ্ছায়
–আমি তোমাদের বড় বোনের মতো আমাকে তুমি করেই বলো
–ঠিক আছে
–হাসপাতালে কাকে নিয়ে এসেছ
–আমাদের একজন ফ্রেন্ড
–আমরা কাল বাসায় চলে যাবো তোমার নাম্বারটা দিয়ে যাও তো
–ঠিক আছে (নাম্বার দিলাম)
আপু এখন যাই আবার দেখা হবে
–ঠিক আছে বেবি তো ঘুমিয়ে আছে নাহলে তোমার কোলে দিতাম
–ঘুমিয়ে থাক অন্য একদিন দেখা হলে কোলে নিবো
–আমি ওর নামটা তোমার পছন্দে রাখতে চাই, নাম রাখার দিন কিন্তু বাসায় আসতে হবে আর নামটা ঠিক করে রেখো
–ঠিক আছে আপু আসি
–আচ্ছা

রিয়া আর আমি শ্রাবণের কেবিনে চলে আসলাম
মা: তমা আমাকে একটু বাসায় যেতে হবে তুই যদি এখানে একটু থাকতি
আমি: ঠিক আছে মা আপনি যান আমি আছি এখানে
রিয়া: তমা তোর তো আজকে আমাদের বাসায় যাওয়ার কথা এক কাজ কর তুই আজকে এখানে থেকে যা কাল শ্রাবনকে রিলিজ করে দিলে একেবারে আমাদের বাসায় চলে যাবি
আমি: কিন্তু
শ্রাবন: তমা প্লিজ থাকো না একদিনই তো
আমি: ঠিক আছে
রিয়া: আন্টি আপনি দুপুরের খাবারটা দিয়ে যাইয়েন আমি রাতের খাবার দিয়ে যাবো আর রাতে আপনাকে এখানে থাকতে হবে না সকালে চলে আসবেন
মা: ঠিক আছে মা

রিয়া আর মা চলে গেলো, শ্রাবণের দিকে থাকালাম ও মিটিমিটি হাসতেছে
–কি হলো হাসতেছ কেন
–এমনি
–বল বলছি
–আজ সারা রাত তোমার সাথে গল্প করবো
–অসুস্থ শরীর নিয়ে
–আমি তো সুস্থ হয়ে গেছি
–হুম বুঝাই যাচ্ছে
–আমার পাশে এসে বসো
–কেন
–এতো প্রশ্ন কর কেন বসতে বলছি বস
–হুম (ওর পাশে গিয়ে বসলাম)
–তমা আমাকে ছেড়ে কখনো চলে যাবা না তো (আমার হাত ধরে)
–হ্যা যাবো খুব তাড়াতাড়ি যাবো
–(চুপ হয়ে আছে)
–এই কাঁদছ কেন আমি তো মজা করেছি
–এই মজা করাটা যদি কখনো সত্যি হয়ে যায়
–আচ্ছা আর কখনো এমন মজা করবো না
–তুমি চলে গেলে আমি মরেই যাবো
–আমি কোথাও যাবো না তোমাকে ছেড়ে আমি থাকতে পারবো নাকি (ওর চোখের পানি মুছে দিলাম)
–ঘুম পাচ্ছে
–ঠিক আছে ঘুমাও
–তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাই
–আচ্ছা
ও আমার কোলে ঘুমিয়ে আছে আমি চুলে বিলি কেটে দিচ্ছি ওর মুখটা অনেক মায়াবী লাগছে ইচ্ছে হচ্ছে ওর কপালে আলতো করে একটা চুমু দেই কিন্তু ও যদি জেগে যায় অনেক লজ্জা পাবো, একজন নার্স আসলো
–বাব্বাহ কতো প্রেম একদম পারফেক্ট জুটি
–(মৃদু হাসলাম)
–উনি কিন্তু আপনাকে সত্যি ভালোবাসেন নাহলে কি কেউ কারো জন্য জীবন দিতে চায়
–জানিনা এই ভালোবাসার পরিণতি কি হবে দোয়া করবেন সব বাধা ফেরিয়ে আমরা যেন এক হতে পারি
–অবশ্যই দোয়া করবো

দুপুর ফেরিয়ে ৩টা বেজে গেছে পাগলটা এখনো ঘুমিয়ে আছে, হঠাৎ মা আসলেন হাতে খাবারের বক্স, আমার দিকে চেয়েই হেসে দিলেন, ও আমার কোলে ঘুমিয়ে আছে মায়ের সামনে কি লজ্জাটাই না পেলাম
–কিরে লজ্জা পাচ্ছিস কেন
–(চুপ হয়ে রইলাম)
–আমি শুধু শ্রাবণের মা না বন্ধুও এখন থেকে তো তোরও বন্ধু, তোদের একসাথে এভাবে সুখি দেখে মরতে পারলেই আমি কবরে গিয়ে শান্তি পাবো
–মা এসব কি বলছেন মৃত্যুর কথা আসছে কেন
–শ্রাবণের যখন সাত বছর বয়স তখন ওর বাবা মারা যান, সেই থেকে খুব কষ্ট করে ওকে বড় করেছি একটাই আশা ওকে সুখী দেখবো, আমি তোর মাঝে ওর সুখ দেখেছি তুই পারবি ওকে সুখে রাখতে
–আমি চেষ্টা করবো মা ওকে সুখে রাখার আপনি শুধু দোয়া করবেন
–মায়ের দোয়া সন্তানদের জন্য সবসময় থাকে, অনেক বেলা হয়েছে ওকে ডেকে তুলে নে, দুজন খেয়ে নিস আমি যাই সকালে আসবো
–ঠিক আছে মা

মা চলে গেলেন, ওকে ডেকে তুললাম, খাবার খাইয়ে ওষুধ খাওয়ালাম, দুজন গল্প করতে করতেই সন্ধ্যা হয়ে গেলো, পায়ের যন্ত্রণা আস্তে আস্তে বাড়তেছে এতক্ষণ তো মনেই ছিলো না আমার যে পা পুরা, যতো রাত হচ্ছে পায়ের যন্ত্রণা ততো বাড়তেছে
–তমা তোমার কি খারাপ লাগতেছে
–কই না তো
–তোমাকে কেমন যেনো দেখাচ্ছে
–এমনি
আসতে পারি স্যার এন্ড ম্যাডাম (রিয়া দরজায় দারিয়ে আছে)
শ্রাবন: আসো অনুমতি লাগে নাকি
রিয়া: যদি তোমাদের রোমান্সে কাবাব মে হাড্ডি হয়ে যাই বলেই হাসতে শুরু করলো
আমি: এই তোর কি মনে হয় সারা দিন-ই আমরা রোমান্স করি
রিয়া: হলে তো হতেও পারে বলে আবার হাসতেছে (এই রিয়াটা পারেও মজা করতে)

তিনজন মিলে অনেক সময় আড্ডা দিলাম ৯টার দিকে রিয়া বাসায় যাওয়ার জন্য উঠলো
রিয়া: এখন যাই সকালে আসবো কোন সমস্যা হলে ফোন করিছ
আমি: আচ্ছা
রিয়া: খাবার আছে দুজন মিলে খেয়ে নিস আর এইযে তোর ওষুধ মনে করে খেয়ে নিস (ব্যাগ থেকে ওষুধ বের করে আমার হাতে দিলো)
আমি: ওষুধের কথা তোর মনে আছে
রিয়া: তোর পা পুরে গেছে আর আমার ওষুধের কথা মনে থাকবে না
শ্রাবন: তমা তোমাকে সন্ধ্যায় এজন্যই এমন দেখাচ্ছিল পায়ে ব্যাথা করছিল তাই না
আমি: হুম একটু
রিয়া: ওষুধ মনে করে খেয়ে নিস আমি যাই
আমি: আচ্ছা

রিয়া চলে গেলো শ্রাবনকে খাবার খাইয়ে ওষুধ খাইয়ে দিলাম আমিও খেলাম, দুজন গল্প করছি হঠাৎ মনে পড়লো শিলা আপুর বেবির নাম রাখার কথা
আমি: এই একটা কথা বলি
শ্রাবন: হাজারটা বলো
–একটা মেয়ে বেবির নাম বলো তো
–(ও অভাক হয়ে আমার দিকে থাকিয়ে আছে)
–কি হলো এভাবে থাকিয়ে আছ কেন
–প্রেম হতে না হতেই বেবির নাম ঠিক করা হচ্ছে
–আমি বলছি নাকি আমাদের বেবির জন্য (লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললাম)
–তো কার
–(ওকে শিলা আপুর কথা সব বললাম)
–আচ্ছা পরে ঠিক করে দিব, আমাদের বেবির নাম কিন্তু আমি ঠিক করে রাখছি
–কি
–নওমি
–এর মধ্যে নামও ঠিক করে ফেলছ
–জ্বী

গল্প করতে করতে কখন যে ভোর ৪টা হয়ে গেলো বুঝতেই পারিনি
–এখন একটু ঘুমাও
–না
–মাইর খাইবা কিন্তু প্রেমিকার হাতে মাইর খাইতে না চাইলে চুপচাপ ঘুমাও
–প্রেমিকা না তো তুমি আমার বউ
–হ্যা বউ এখন ঘুমাও প্লিজ নাহলে আবার অসুস্থ হয়ে পরবা
–ঠিক আছে
পাগলটা ঘুমিয়ে পড়েছে আমি পাশের চেয়ারে বসে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতেই পারিনি সকালে আমার কপালে আলতো স্পর্শে ঘুম ভাঙ্গলো চোখ খুলে দেখি শ্রাবন আমার দিকে চেয়ে হাসতেছে আর চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে বুঝলাম ফাজিলটা আমার কপালে চুমু দিয়েছে, লজ্জায় আবার চোখ বোঝে ফেললাম
–আর লজ্জা পেতে হবে না অনেক বেলা হয়েছে আম্মু চলে আসবে উঠো
–কয়টা বাজে
–১০টা
–এতো বেলা হয়েছে ডাকোনি কেন

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে