অবুঝ_বউ পার্ট: ১৬

0
3719

অবুঝ_বউ

পার্ট: ১৬

লেখিকা: সুলতানা তমা

চোখ দুটু বন্ধ করে ফেললাম পিচ্ছিটার সেই হাসি কথা বলা সবকিছু অনুভব করছি….

এতোক্ষণ ধরে কলিংবেল বাজিয়ে যাচ্ছি কেউ দরজা খুলছেই না, মা নাহয় ঘুমে হয়তো কিন্তু সোহাগীটা কোথায় যে থাকে, হঠাৎ আম্মু এসে দরজা খুলে দিলেন আর আমাকে দেখা মাত্র জরিয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলেন
–আম্মু কি হয়েছে
–কিছুনা বাবা যা ফ্রেশ হয়ে নে আমি তোর জন্য খাবার দিচ্ছি
–ঠিক আছে
ড্রয়িংরুমে এসে চারদিকে চোখ বুলিয়ে সোহাগীকে কোথাও দেখতে পেলাম না
–কিরে নাহিল কি খুঁজছিস
–আম্মু সোহাগী….
–রুমেই আছে
আম্মুর সামনে আস্তে আস্তে হেটে আসলাম আম্মুর চোখের আড়াল হতেই এক দৌড়ে রুমে চলে আসলাম কিন্তু রুমে তো সোহাগী নেই, চোখ পড়লো বারান্দার দিকে, বারান্দার দরজা খোলা দেখেই বুঝতে পারলাম মহারাণী ওখানেই আছেন তাই আস্তে আস্তে গিয়ে সোহাগীকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলাম ও চমকে উঠে আমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার মুখ ফিরিয়ে নিল
–এভাবে কেউ হুট করে জরিয়ে ধরে
–রাগ করছ কেন এতোদিন পর….
–এতোদিন হয়েছে তো তাতে কি হয়েছে এসেই এভাবে জরিয়ে ধরতে হবে নাকি
–রেগে আছ কেন প্লিজ বলো
সোহাগীর দুগালে হাত দিয়ে ধরে জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু ও কোনো উত্তর না দিয়ে আমার হাত সরিয়ে দিয়ে রুমে চলে গেলো, আমি বোবার মতো দাঁড়িয়ে আছি সোহাগী তো কখনো এমন করতো না তাহলে আজ কেন এমন করছে
–নাহিল খেতে আয় (আম্মুর ডাক শুনে সোহাগীর কাছে গেলাম)
–সোহাগী চলো আমাকে খাবার দিবে
–আম্মু দিয়েছে তো
–তুমি দিলে দোষ কোথায়
–এতো পারবো না
আর কিছু না বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম

খেতে বসেছি হঠাৎ আম্মুর দিকে চোখ পড়লো সোফায় বসে আছেন আর আমার দিকে তাকিয়ে কাঁদছেন, আর খেতে পারলাম না উঠে সাজিদ এর সাথে দেখা করতে চলে গেলাম

সাজিদের সামনে বসে আছি ও আমার দিকে কেমন করে যেন তাকাচ্ছে
–এভাবে তাকাচ্ছিস কেন
–কিভাবে
–আচ্ছা বলবি কি হয়েছে সবাই আমার থেকে লুকাচ্ছিস কেন
–কিছু লুকাইনি রাত হয়েছে বাসায় যা সকালে আমি আসবো
–ঠিক আছে

বাসায় এসে দেখি সোহাগী বারান্দায় দাঁড়ানো বাহ্ বারান্দা যেন ওর ঠিকানা হয়ে গিয়েছে, ওকে আর ডাকলাম না এসে শুয়ে পড়লাম খাবো না দেখি ও খেতে ডাকে কিনা, হঠাৎ মোবাইল বেজে উঠলো রিসিভ করলাম
–হুম মুমু বল
–কখন আসলি ফোন দিলি না
–এসেই যা দেখছি মন ভালো নেই
–সকালে আমাকে দেখতে আসবি
–না কোথাও যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না তুই বরং সজিবকে নিয়ে চলে আসিস একসাথে লাঞ্চ করবো
–ঠিক আছে

ফোন রেখে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম মনেই নেই ক্লান্ত শরীর তো বিছানায় শুতেই ঘুম ধরে গিয়েছিল, মাঝরাতে হঠাৎ কারো হাসির শব্দে ঘুম ভেঙে যায়, ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখি এখনো বাতি জ্বালানো সোহাগী বিছানায় নেই, দেয়াল ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাত প্রায় দুটু বাজে এতো রাতে এই পিচ্ছি মেয়ে যাবে কোথায়, হঠাৎ বারান্দার দরজার দিকে চোখ পড়লো দরজা খোলা কিন্তু এমন ভাবে রাখা আছে খোলা যে বুঝাই যায় না, আমি আস্তে আস্তে উঠে দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম সোহাগী কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে আর হাসছে, এতো রাতে ও কার সাথে কথা বলবে ভেবে পাচ্ছি না, দরজা খোলে ওর পিছনে গিয়ে দাঁড়ালাম ও আমার উপস্থিতি টের পেয়ে ফোন রেখে রুমে চলে আসলো, আমি রুমে এসে বিছানায় বসে ওর দিকে শান্তভাবে তাকিয়ে বললাম
–কার সাথে কথা বলছিলে
–আমার একটা ফ্রেন্ড
–হুম রাত দুইটার সময় যে ফ্রেন্ড এর সাথে কেউ কথা বলে না সেটা আমি জানি
–(নিশ্চুপ)
–ভয় করে না এতো রাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে
–না
–আজ তো ফোনে দিব্বি জোরে জোরে হাসলে সেদিন আমি বলাতে বলেছিলে হঠাৎ করে হাসা যায় নাকি
–তোমার কথামতো আমাকে হাসতে হবে নাকি
–একদম না, ঘুমিয়ে পর
চোখ বাধা মানছে না খুব কাঁদতে চাইছে কোনো ভাবে নিজেকে শান্ত করে শুয়ে পড়লাম, সোহাগী সোফায় শুয়েছে ডাকিনি থাকুক নিজের মতো করে

সকালে আম্মুর ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো সোহাগী সোফায় ঘুমিয়েছে দেখলে আম্মু কি ভাববে তাই ওকে কোলে তুলে বিছানায় এনে শুয়ে দিলাম, দরজা খুলে দেখি আম্মু কফি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন
–আম্মু এখন কফি খাবো না
–কেন
–আরো ঘুমাবো আর শুন দুপুরে মুমু আসবে সবাই একসাথে লাঞ্চ করবো
–ঠিক আছে
ভাবছি বিছানায় ঘুমাবো কিনা যদি সোহাগী রেগে যায় তাই সোফায় ঘুমিয়ে পড়লাম

–ভাইয়া এই ভাইয়া উঠ
–মুমু তুই কখন আসলি
–অনেক্ষণ হলো আম্মু তোকে ডাকতে নিষেধ করেছিল কিন্তু এখন তো লাঞ্চের সময় হয়ে গিয়েছে উঠে পর
–ঠিক আছে
–ভাইয়া তুই সোফায়….
–এমনি সকালে আম্মুর সাথে কথা বলে এসে শুয়ে ছিলাম তারপর কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানিনা
–আচ্ছা তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়
–হুম
এতোক্ষণ ধরে ঘুমালাম আর সোহাগী একবার ডাকলোও না কি যে হয়েছে ওর, এসব ভাবতে ভাবতে গোসলে চলে গেলাম

গোসল করে নিচে এসে দেখি ড্রয়িংরুমে জিসান বসা ওকে দেখেই তো রাগ উঠে গেলো, আমি গিয়ে মুমুর পাশে বসে আস্তে করে জিজ্ঞেস করলাম
–সজিব আসেনি
–না ওর কাজ পরে গেছে পরে আসবে
–তাহলে জিসানকে কেন….
–আমাকে তো একা আসতে দিবে না তাই ও এসেছে
–হুম
–সাজিদ ভাইয়া এসেছে অনেক্ষণ হলো
–কোথায়
–রান্নাঘরে আম্মুকে হেল্প করছে
–ও না পারেও বটে কিন্তু সোহাগী কোথায়
–দেখিনি ছাদে হবে
–ভালো তো পিচ্ছি বলে সবাই মাথায় তুলে রেখেছ
–ভাইয়া চুপ কর খেতে চল
–যা মহারানী কে ডেকে নিয়ে আয়
–ওকে

সবাই একসাথে খেতে বসেছি শুধু আব্বু ছাড়া কারন আব্বু অফিসে, জিসানকে এমনি রাগ উঠে আর সোহাগী গিয়ে ওর সামনের চেয়ারে বসেছে, কিছু বললাম না শুধু রাগি চোখে ওর দিকে একবার থাকালাম
মুমু: ভাইয়া তুই অনেক শুকিয়ে গেছিস
সাজিদ: ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করেনি হয়তো
আমি: আর খাওয়া দাওয়া যা কাজের চাপে পড়েছিলাম রাতদিন এক করে কাজ করতে হয়েছে
সাজিদ: ভাবি নাহিলকে এখন ভালো করে খাওয়াও যেন আগের চেয়ে মোটা হয়ে যায় হাহাহাহা (সাজিদের কথার উত্তর না দেওয়াতে সবাই সোহাগীর দিকে তাকালাম ও একমনে খেয়ে যাচ্ছে আর পা নাচাচ্ছে, জিসানের দিকে তাকালাম জিসানও পা নাচাচ্ছে দেখে টেবিলের নিচে তাকালাম বাহ্ আমার পিচ্ছি বউ তো অনেক বড় হয়ে গিয়েছে এখন তো আর ও অবুঝ নেই অনেক বুঝদার হয়ে গেছে তাই তো সবার চোখের আড়ালে জিসানের পায়ের সাথে ওর পা দিয়ে খেলা করছে, আম্মু এসব দেখে না খেয়ে উঠে চলে গেলেন, মুমু আমার দিকে কাঁদোকাঁদো হয়ে তাকিয়ে আছে, আরেকবার দুজনের দিকে তাকালাম জিসান হাত দিয়ে সোহাগীকে ইশারা দিলো ছাদে যাওয়ার জন্য, আর ভালো লাগছে না এসব দেখতে না খেয়েই উঠে রুমে চলে আসলাম, কি হলো এইটা আমার সোহাগী শেষ পর্যন্ত….
–নাহিল (সাজিদের ডাকে তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিলাম)
–এখন কান্না করে লাভ নেই
–তারমানে তুই জানতি
–হুম আমরা সবাই ওদের ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছিলাম
–আমি বার বার জিজ্ঞেস করার পরও আমাকে বলিস নি কেন
–আঙ্কেল নিষেধ করেছিলেন তুই বাহিরে থাকা অবস্থায় যেন কিছু না বলি কারন সেখানে তুই একা নিজেকে সামলে নিতে পারবি না
–খুব ভালো, তো এখন আমি কিভাবে সহ্য করবো এসব
–তুই শান্ত হ প্লিজ রেগে গিয়ে চেঁচামেচি করলে সমস্যার সমাধান হবে না ভেবে চিন্তে কিছু করতে হবে
–সাজিদ তুই এইটাকে সমস্যা বলছিস তুই দেখিসনি ওদের দুজনের সম্পর্ক কতোটা গভীর
–প্লিজ তুই শান্ত হ…
–সোহাগী কোথায়
–(নিশ্চুপ)
–ছাদে তাই তো
–হুম দেখলাম ছাদের দিকে যাচ্ছে
–ওকে তুই ড্রয়িংরুমে যা আমি আসছি
–হুম

ছাদের দরজা আস্তে আস্তে খোলে চারপাশে একবার চোখ বুলালাম, হঠাৎ একপাশে চোখ আটকে গেলো যা কখনো ভাবিনি যা দেখার জন্য মুটেও প্রস্তুত ছিলাম না সোহাগী আমাকে সেটাই দেখালো, ছাদের রেলিং এ হেলান দিয়ে সোহাগী দাঁড়িয়ে আছে আর হাসছে জিসান ওর চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে মাঝে মাঝে হাতে মায়া দিচ্ছে, এসব দৃশ্য সহ্য হচ্ছে না মাথাটা কেমন যেন ঘুরছে খুব কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে সোহাগীর দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম…..

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে