অবুঝ_বউ পার্ট: ১১

0
4203

অবুঝ_বউ

পার্ট: ১১

লেখিকা: সুলতানা তমা

আজ খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম উঠেই ফ্রেশ হয়ে নিজের হাতে দুই মগ কফি বানালাম, কফি হাতে নিয়ে রুমে এসে বিছানায় বসলাম সোহাগী এখনো ঘুমাচ্ছে পাগলীটা হয়তো ভুলেই গেছে আজকে ওর পরিক্ষা, এই কয়েকটা দিন কিভাবে যেন কেটে গেলো সোহাগীর সাথে দুষ্টুমি খুনসুটিতে মেতে ছিলাম
–সোহাগী উঠ
–পরে
–আজকে যে তোমার পরিক্ষা ভুলে গিয়েছ নাকি (তাড়াতাড়ি উঠে বসলো তারপর ঘুম ঘুম চোখে বললো)
–আমার খুব ঘুম পাচ্ছে পড়বো কিভাবে
–এই নাও কফি খাও ঘুম চলে যাবে
–তুমি বানিয়েছ
–হ্যাঁ আমার পিচ্ছি বউটার জন্য
–হিহিহি তুমি খুব ভালো
–কফি খেয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও তারপর রাতে যা পড়েছ সেগুলো আবার রিভিশন দাও
–ওকে

সোহাগী টেবিলে বসে পড়ছে আর আমি বিছানায় বসে বসে ওকে দেখছি হ্যাঁ সবাই ওকে পিচ্ছি বলে কিন্তু এই পিচ্ছিটা কেই আমি ভালোবাসি এই পিচ্ছি মেয়েটাই আমার সবকিছু, হঠাৎ সোহাগী আমার দিকে তাকালো আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ঠিক আমি যেভাবে ওকে চোখ টিপ দেই ও সেভাবেই চোখ টিপ দিয়ে হেসে দিলো, হাহাহাহা আমার পিচ্ছি বউ আস্তে আস্তে বড় হয়ে যাচ্ছে, বিছানা থেকে উঠে সোহাগীর পাশে একটা চেয়ারে গিয়ে বসলাম ও আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকিয়ে জিজ্ঞেস করলো
–কি (কিছু না বলে ওর একটা হাত আমার হাতের মুঠোয় আনলাম সোহাগী আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আস্তে আস্তে ঠোট দুইটা ওর ঠোটের দিকে এগিয়ে নিলাম)
মুমু: ভাইয়া নাশতা করবি না (আহারে আমার বোন আর ডাক দেওয়ার সময় পেলনা)
আমি: আসছি যা
মুমু: তাড়াতাড়ি আয় ভাবির পরিক্ষার সময় হয়ে যাচ্ছে
আমি: দিলো আমার রোমান্সের বারোটা বাজিয়ে
সোহাগী: আপু তোমার রোমান্সের বারোটা বাজাইছে আর তুমি আমার পড়ার বারোটা বাজাইছ
আমি: আর পড়তে হবে না ম্যাডাম যা পড়েছ তাতেই হবে এখন নাশতা করতে চলো
সোহাগী: ওকে

সোহাগীকে নিয়ে স্কুলে আসলাম গাড়ি থেকে নেমে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো
–বাসায় চলে যাও
–না আজকে তোমাকে নিয়েই একেবারে যাবো
–এতো সময় এখানে থাকবা
–সমস্যা নেই তুমি ভালো করে পরিক্ষা দিও
–ওকে
সোহাগী চলে গেলো আমি এখনো তাকিয়ে আছি ও গেইটের সামনে যেতেই পিয়ালের মুখামুখি হলো, দূর থেকে বুঝা গেলো না ওরা কি কথা বলছে তবে সোহাগী আজ হেসে হেসে একটু কথা বলেই পিয়াল কে রেখে চলে গেলো, যাক পিয়ালের ভূতটা তাহলে মাথা থেকে নেমেছে

স্কুলের পাশের চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছি হঠাৎ সামনে চোখ পড়লো দুলাভাই এদিকে তাও আবার আমার দিকেই আসছে, এসে আমার পাশে বসে পড়লো চায়ের অর্ডার দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বত্রিশটা দাঁত বের করে একটা হাসি দিল যেমন জঘন্য মানুষ তেমন তার হাসি
–আমার শালিকা কে স্কুলে নিয়ে এসেছ
–হ্যাঁ
–সেদিন কিন্তু কাজটা মুটেও ঠিক করনি
–কোনটা ঠিক কোনটা ভুল সেটা বুঝার মতো বয়স আমার হয়েছে
–তবে যাই বলো সোহাগীর চেয়ে ওর সম্পত্তির প্রতি আমার লোভটা বেশি
–অন্যের জিনিসের প্রতি লোভ করা ভালো না আর সোহাগী এখন আমার স্ত্রী তাই….
–বুঝেছি সোহাগীর কথা বাদ দাও কিন্তু সম্পত্তি
–এইটার মালিক সোহাগী ওর সম্পত্তির উপর আমার কোনো লোভ নেই তাই ওর সম্পত্তি ওর যা খুশি করবে….
–হাহাহা তাহলে আমার শালিকা কে বলো সব সম্পত্তি আমার নামে লিখে দিতে
–কেন আপনি কি যে আপনাকে ভয় পেয়ে সম্পত্তি দিয়ে দিতে হবে
–জানি সোহাগীকে কিছু করা সম্ভব না কিন্তু ভুলে যেও না ওর বোন কিন্তু আমার স্ত্রী
–ভয় দেখাচ্ছেন
–না তবে….
–সোহাগীর পিছু ছেড়ে দিন
–সম্পত্তি পেলে ছেড়ে দিব সাথে ওর বোনকেও সুখে রাখবো
–যদি টাকা দেই
–হুম হবে
–ঠিক আছে পেয়ে যাবেন
আবারো বত্রিশটা দাঁত বের করে হাসি দিয়ে চলে গেলো, মানুষ এতো খারাপ হয় ওকে না দেখলে বুঝতাম না, সুখের সংসারে দুঃখ আসুক তা আমি চাই না তাছাড়া আপু যদি একটু সুখে থাকেন সেই আশায় ওকে টাকা দিতে রাজি হয়েছি

গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে আছি হঠাৎ সোহাগী দৌড়ে এসে আমাকে জরিয়ে ধরলো তারপর আমার গালে মায়া দিয়ে দিল আমি তো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি, যে মেয়ে আমাকে কখনো মায়া দেয়নি সে কিনা আজ
–ওই কি হলো (সোহাগীর ধাক্কায় হুশ ফিরলো তাকিয়ে দেখি আশেপাশের মানুষ আমাদের দিকে তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসছে)
–কথা বলছ না কেন
–আসলে তুমি আমাকে মায়া দিয়েছ জরিয়ে ধরেছ তোমার স্পর্শে কেমন যেন জমে গেছি
–তাই
–হঠাৎ এভাবে….
–আমার পরিক্ষা অনেক ভালো হইছে এই খুশিতে
–তাহলে তো প্রতিদিন তোমার উষ্ণ ছুঁয়া পাওয়ার জন্য হলেও তোমাকে রোজ ভালো ভাবে পড়াতে হবে (মনে মনে বললাম)
–কি হলো বাসায় যাবে না
–হুম যাবো তার আগে চলো ফুচকা খাই
–সত্যি
–হ্যাঁ

সোহাগীকে নিয়ে ফুচকা খেয়ে কিছু সময় ঘুরাঘুরি করে সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরলাম

রাতের খাবার শেষে সোহাগী পড়তে বসলো আর আমি ওর পাশেই বসে আমাদের ব্যবসার কিছু ফাইল দেখছি আর মাঝে মাঝে ওকে পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছি, সোহাগী বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে
–কিছু বলবে
–আমার না আজ পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে না
–মন দিয়ে পড় আগামীকাল পরিক্ষা ভালো হলে তো আমিও কিছু পাবো
–কি
–(মৃদু হাসলাম)
পাগলীটাও হাসলো, তাহলে কি আমার অবুঝ বউ আস্তে আস্তে সব কিছু বুঝতে শিখেছে

দেখতে দেখতে সোহাগীর পরিক্ষা শেষ হয়ে গেলো এখন শান্তি মতে একটু রোমান্স করা যাবে হিহিহি
–একা একা হাসছ কেন
–ভাবছি বউটার সাথে এখন রোমান্স করবো
–তাই
–জ্বী
–আগে আপুর বিয়ের সবকিছু ঠিক কর
–হ্যাঁ খুব শীঘ্রই করবো (বলেই সোহাগীকে জরিয়ে ধরলাম ও ছুটে যাওয়ার জন্য জোরাজোরি করছে আমি আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম)
আম্মু: নাহিল একটু ড্রয়িংরুমে আয় তো
আমি: আসছি (ডাক দেওয়ার আর সময় পেলে না)
সোহাগী: হিহিহি যাও
সোহাগীর দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে নিচে চলে আসলাম, আব্বু আর আম্মু ড্রয়িংরুমে বসে আছেন
আমি: আব্বু কিছু বলবে
আব্বু: হ্যাঁ বউমার তো পরিক্ষা শেষ এইবার মুমুর বিয়েটা ঠিক করে ফেল
আমি: ঠিক আছে
আম্মু: আগামীকাল ওদের বাসায় যা একেবারে সব ঠিক করে আসবি
আমি: কিন্তু তোমরা তো সজিবকে দেখনি
আম্মু: ওরা তো মুমু কে দেখেনি আর তুই দেখেছিস আর দেখার কি আছে মুমু ভালোবাসে এটাই বড় কথা
আমি: ঠিক আছে আমি আগামীকাল গিয়ে সব ঠিক করে আসবো

রুমে এসে দেখি সোহাগী ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ওকে একটু জ্বালাই
–সোহাগী চলো ছাদে যাই
–এতো রাতে ছাদে যাবো পাগল হয়েছ
–গেলে কি হয়
–আমার ভয় করে
–ছাড়াচ্ছি তোমার ভয়
সোহাগীকে কোলে তুলে নিলাম তারপর ছাদে চলে আসলাম, সোহাগীকে বসিয়ে আমি ওর পাশে বসলাম, মৃদু বাতাস বইছে খুব ভালো লাগছে
–নাহিল তুমি সবসময় এমন পাগলামি করো কেন
–তোমার সাথে পাগলামি করতে ভালো লাগে
–তাই
–জ্বী তাই
সোহাগী আমার দিকে তাকিয়ে আছে পূর্ণিমার চাঁদের আলো ওর মুখে এসে উপছে পড়ছে ওকে খুব বেশি মায়াবতী লাগছে এখন, সোহাগীকে আমার কোলে শুয়ে দিলাম ও আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এই চাওয়ায় কেমন যেন নেশা মিশানো, কোনো কিছু না ভেবে ঠোট ডুবিয়ে দিলাম ওর নেশা ধরানো মিষ্টি দুইটা ঠোটে…..

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে