অজানা_অনুভূতি পার্ট: ১৮

0
2990

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ১৮

#Rabeya Sultana Nipa

 

সারাদিনের ক্লান্তিতে এখন আর কিছু ভালো লাগছেনা।কাকাই,নীরা সবাই চলে গেলো।কাল যখন সবাই আসবে তাদের খবর আছে।মনে করেছেটা কি আমাকে?

—কিরে কি ভাবছিস? কথাটা শুনেই চমকে উঠলো প্রাপ্তি।তাকিয়ে দেখে বড় ভাবী খাবার নিয়ে এসেছে।

বড় ভাবী -বললি নাতো কি ভাবছি? ফারহানের কথা ভাবছিস? তবে আর বেশীক্ষন ভাবতে হবে না।তোকে একটু পরেই রুমে দিয়ে আসবো।সকাল থেকেই তুই নাকি কিছু খাসনি।তোর মেজো মা ফোন দিয়ে বলেছে।এখন হা কর আমি খাইয়ে দিচ্ছি।

প্রাপ্তি রুমের কথা শুনেই ঘামতে শুরু করলো।বুকের ভেতর কেমন জানি মোচড় দিয়ে উঠলো।মনে হচ্ছে কেউ পিটিয়ে সব শেষ করে পেলছে।

বড় ভাবী-কিরে খাবিনা?এইভাবে চুপ হয়ে আছিস কেন?

প্রাপ্তি-আমার খেতে ইচ্ছে করছে না।

বড় ভাবী -এই কথা ফারহান শুনলে ওই এসে তোকে খাওয়াবে। ঠিক আছে আমি তাহলে ফারহানকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

প্রাপ্তি-না না ওকে পাঠানোর দরকার নেই।আমি তোমার হাতেই খাবো।
কথাটা শুনে বড় ভাবী হেঁসে দিলেন।
প্রাপ্তির খেতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু কোনো উপায় নেই খেতে হবেই।

বড় ভাবী -(প্রাপ্তিকে খাওয়াতে খাওয়েতে)জানিস প্রাপ্তি এই বাড়ীতে আমি যখন এসেছি ফারহান সুমি ওরা তখন ছোটো ছিলো।মামনির (ফারহানের মা)ছেয়ে এরা বেশী আমার কাছেই থাকতো।ওরা আমায় খুব ভালোবাসে। এখন তুমিও এমন ভাবে চলবে যাতে সবাই তোমাকে ভালোবাসে।

(প্রাপ্তি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললেন।)তোমার সাথে তো লামিয়ার (ফারহানের মেজো ভাবী) তেমন কথা হয়নি।আসলে ও সবার সাথেই কথা কম বলে।যদি একবার শুরু করে তাহলে আর সহজে থামেনা।এই বাড়ীতে থাকতে থাকতে সব কিছু শিখে যাবে।
সুমি এসে বড় ভাবীকে বললো
আম্মু বলেছে অনেক রাত হয়েছে ছোটো ভাবীকে তার রুমে দিয়ে আসতে।কিন্তু ছোটো ভাইয়া কোথায় গেলো ওকে তো দেখছিনা।

বড় ভাবী -আচ্ছা এখনি দিয়ে আসছি
দেরি হলে মামনি রাগ করবে।
সুমি! মামনি কি করছে? বিকেলে একবার বলছে শরীর ভালো লাগছে না।আচ্ছা চল,প্রাপ্তিকে আগে ফারহানের রুমে দিয়ে আসি।তারপর মামনির রুমে যাবো।সুমি লামিয়াকেও ডাক।

সুমি-তোমরা আসো যাবার সময় ডেকে নিবো।

প্রাপ্তিকে নিয়ে সবাই ফারহানের রুমে গেলো।প্রাপ্তি রুমের অবস্থা দেখে চোখ কপালে উঠে গেলো।এতো সুন্দর করে তাদের বাসরঘরটা সাজানো হয়েছে।অবশ্য সব কিছু ফারহানের বন্ধুরাই সাজিয়েছে।

বড় ভাবী -কিরে তোর পছন্দ হয়েছে?

প্রাপ্তি কিছু না বলে চুপ করে আছে।প্রাপ্তি মনে মনে ভাবছে কেউ না জানুক ফারহান তো জানে ওর সাথে আমার শর্ত দিয়েই বিয়ে হয়েছিলো তাহলে কেন আবার এসব করতে গেলো?

সুমি-বুজেছি লজ্জা পাইছে।আচ্ছা আমি এখান থেকে যাই, আমার এইখানে কোনো কাজ নেই।
মেজো ভাবী- বড় ভাবী আমিও যাই।আমাদের দেখে ফারহান লজ্জা পেয়ে রুমেও আসবে না।

বড় ভাবী -প্রাপ্তি তাহলে তুমি থাকো।ফারহানও চলে আসবে।আমরা তাহলে যাই।

মেজো ভাবী -রাতের গল্পটা কাল ভালো ভাবে যেন শুনতে পাই এই বলে দিলাম।

কথাটা শুনে প্রাপ্তি লামিয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে(মনে মনে ভাবছে, কথা বলতে পারেনা এইগুলা ঠিকি শুনতে ইচ্ছা করে,আর এমন কিছু হবেও না যা তোমাদের বলবো।)নিশ্চয় গল্পটা বলবো।
বড় ভাবী -এইবার তাহলে চল।

সবাই প্রাপ্তিকে রুমে রেখে চলে আসলো।
সবাই যাওয়ার পর প্রাপ্তি দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ছেড়ে পা দুটো ঝুলিয়ে খাটের উপর বসলো।রুমের চারদিকে তাকিয়ে ভাবছে রুমটা সত্যি অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে।তবে ভুল জাগায় ভুল মানুষের জন্য সাজিয়েছে।এইরুম টা আজ ফারহানের সেই ভালোবাসার মানুষের জন্য সাজানোর কথা ছিলো।কিন্তু আমি ভুল মানুষ হয়েই তার জীবনে ঢুকে পড়লাম।আচ্ছা আমি তো ইচ্ছে করে তার জীবনে আসিনি।ও তো পারতো বিয়েটা না করতে।হয়তো ছেলেরা এই রকমই।যেমন আয়ান,একটা বার ফোন করে বললো না প্রাপ্তি তুমি আমার কাছে চলে আসো। আমরা দুজনে একসাথেই থাকবো।বরং ফোনটাই অফ করে রেখেছে।ওহঃ মাথায় কেন যে এইসব চিন্তা আসে বুজিনা।প্রাপ্তি ঘড়ীর দিকে তাকিয়ে দেখে ১.০০ টা বাজে।ফারহানতো এখনো আসে নাই।যাইহোক তাড়াতাড়ি সকাল হলেই বাঁচি।

ফারহান ছাদ থেকে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে নিজের রুমে যেতেই মেজো ভাবী সাথে ফারহানের ধাক্কা লেগে যায়।

মেজো ভাবী -কি ব্যাপার ফাহান তুমি এখনো রুমে যাওনি।কোথায় ছিলে এতোক্ষন?প্রাপ্তি রুমে সে কখন থেকে একা একা বসে আছে।

ফারহান-ছাদে ছিলাম।তুমি এতো রাতে কোথায় যাচ্ছো?

মেজো ভাবী -পানি নিতে আসছিলাম।আচ্ছা তাড়াতাড়ি রুমে যাও প্রাপ্তি একা বসে আছে।আর কাল আমি রাতের গল্পটা ভালোভাবে শুনবো বলে দিলাম।

ফারহান আর কাথা না বাড়িয়ে হাঁসি দিয়ে রুমে দিকে গেলো।
লাইট এখনো অন তার মানে প্রাপ্তি এখনো ঘুমায়নি।

ফারহান কে রুমে ঢুকে দরজা আটকাতে দেখ প্রাপ্তি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।

ফারহান- কি ব্যাপার? এতো তাড়াহুড়ো করে দাঁড়ানোর কি আছে?

প্রাপ্তি -তুমি দরজা আটকালে কেন?
তোমার শর্তের কথা ভুলে গেলে চলবে না।

ফারহান -আমি এই কারনেই রুমে আসতে চাইনি ।দরজা না আটকালে সবাই কি ভাববে বলো?

প্রাপ্তি-আচ্ছা রুমটা এতো সুন্দর করে সাজালে কেন? সাজিয়েছো ঠিকি তবে ভুল মানুষের জন্য।

ফারহান- আমি ঠিক মানুষের জন্যই সাজিয়েছি।এই ভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে বসতে পারো।

প্রাপ্তি-এখন তো আমাদের বিয়েটা হয়ে গেছে এখন আমার কাছে তুমি সব সত্যি বলতে পারো।

ফারহান-কিসের সত্যি?

প্রাপ্তি-তুমি যাকে ভালোবাসো তাকে বিয়ে না করে আমাকে কেন করলে?

প্রাপ্তির কথাটা শুনে ফারহান না হেঁসে থাকতে পারলোনা।

প্রাপ্তি-আমার কথা শুনে তোমার হাঁসি পাচ্ছে?
ফারহান-এইসব কথা বাদ দাও।তুমি ঘুমাবেনা?শাড়ী আর ভারী গহনা পরে তো ঘুমাতে পারবে না।আমার আলমারিতে কিছু ড্রেস আর শাড়ী আছে।যেইটা পছন্দ হয় পরতে পারো।

প্রাপ্তি-তোমার আলমারিতে মেয়েদের জামাকাপড় কেন? ও বুজেছি যাকে ভালোবাসো তার জন্য নিয়েছো।কিন্তু আমি তো অন্য কারো ড্রেস পরবোনা।

ফারহান- অন্য মেয়ের জন্য কিনতে যাবো কেন? এই গুলো সব তোমার জন্যই।বিয়ের শপিং করতে গিয়ে এইগুলো পছন্দ হলো তাই নিয়ে আসলাম।

প্রাপ্তি আলমারি খুলে ড্রেস গুলো দেখে সব ওর মাপের এবং পছন্দের। তাই ফারহানের কথা বিশ্বাস করে একটা শাড়ী নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলো।
ফারহান তাকে ওয়াসরুমে যেতে দেখে কিছু না বলেই ফোনটা হাতে নিয়ে খাঁটের উপর হেলান দিয়ে বসে পড়লো।এইটা বাসরঘর নাকি হিটলারের ঘর আল্লাহ ভালো।সবার বাসরঘরে মধুর কিছু স্মৃতি জড়িয়ে থাকে।আর আমার কপালে হিটলারের জাড়ি খাওয়া ছাড়া আর কিছুই নাই।সব দোষ আমার কপালের।জেনে বুজেই তো বিয়ে করলাম।ফারহান তোর কপালে বাসরঘরে প্রাপ্তির ভালোবাসা নেই।আছে শুধু রাগ আর অভিমান। ফারহান নিজে নিজেই কথা গুলো বিড়বিড় করে বলছে আর ফোনে গেমস খেলতেছে।

প্রাপ্তি ফ্রেশ হয়ে এসে

প্রাপ্তি- আমি কোথায় ঘুমাবো?

প্রাপ্তির কথা শুনে ফারহান তাকিয়ে আছে।যতো দেখছি ততো ভালোবেসে ফেলছি।ওর দিকে তাকালে আর চোখ ফিরাতে ইচ্ছে করে না।শাড়ীটা ওকে মানিয়েছে ভালো।

প্রাপ্তি-তুমি এইভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আমি কোথায় ঘুমাবো সেটা তো বলবে।

ফারহান-কেন খাঁটে।

প্রাপ্তি-তোমার সাথে? মাথা খারাপ।তুমি শর্ত ভুলে গেলে চলবে না।

ফারহান-তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে পারো।আচ্ছা ঠিক আছে আমি নিছে ঘুমাচ্ছি তুমি খাঁটেই ঘুমাও।

কথাটা বলে ফারহান উঠে গেলো নিছে ঘুমাবে বলে।প্রাপ্তি ও কোনো বাধা দেয়নি।

ফারহান একটা বালিশ নিয়ে শুয়েছে দেখে
প্রাপ্তি ভাবছে তুমি নিজের বিপদ নিজেই টেনে এনেছো।এখন বুজো ঠেলা।কিন্তু এই ঠান্ডায় ঘুমাবে কি করে।যতোই হক আমি কাজটা ঠিক করিনি।কথাটা ভাবতেই প্রাপ্তি শোয়া থেকে উঠে বসলো। আচ্ছা ওকে কি ডাকে বলবো খাঁটে শুতে।আচ্ছা একবার বলে দেখি।ও তো বলেছে ওকে বিশ্বাস করতে।

প্রাপ্ত-ফারহান! ফারহান! তুমি কি ঘুমিয়ে গেছো?

ফারহান-(ঘুম চোখে নিয়ে)হুম বলো।তুমি এখনো ঘুমাওনি?

প্রাপ্তি-আমার ঘুম আসছে না।তুমি খাঁটে এসে ঘুমাও।

ফারহান- সমস্যা নেই তুমি ঘুমাও।সকালে অনেক কাজ আছে।(মনে মনে ভাবছে ব্যাপার টা বুজলাম না।কি আবার হলো এর মাঝে)

প্রাপ্তি -তুমি উপরে আসবে নাকি আমিও নিছে নামবো?

ফারহান- আচ্ছা ঠিক আছে নামতে হবে না।তোমাদের মেয়েদের মন বুজায় বড় মুশকিল। কখন কি করো তার ঠিক নেই।

প্রাপ্তি-হুম ওই পাশে ঘুমাও।আমার কাছে আসার একদম চেষ্টা করবানা বলে দিলাম।

ফারহান-ঠিক আছে।এইবার তো ঘুমাতে পারি তাইনা।তোমাকে তো একটা কথা বলতে ভুলেই গেছি।

প্রাপ্তি -কি?

ফারহান-সকাল বেলা মেজো ভাবী এসে জিজ্ঞাস করবে রাতের গল্পটা।প্লিজ এমন কিছু বলোনা যাতে আমাদের কেউ সন্দেহ করে।

প্রাপ্তি- তোমার কি আশা আমি ভাবীদের কাছে বলবো তুমি আমায় কিভাবে ভালোবাসছো কিভাবে জড়িয়ে ধরছো এইসব।

ফারহান- প্রয়োজনে বানিয়ে বানিয়ে তাই বলবা।সত্যি বলার পথ তুমি নিজেই বন্ধ করে দিয়েছো।এখন মিথ্যা বলা ছাড়া তোমার কাছে কোনো উপায় নেই।

কথাটা বলেই ফারহান অন্য দিকে ফিরে শুয়ে পড়লো।
প্রাপ্তি বসেই আছে।আমাকে মিথ্যা বলতেই হবে। ফারহান আমার জন্য অনেক কিছুই করছে না হয় আমি এইটুকুই করলাম।

চলবে,,,,,

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে