অজানা_অনুভূতি পার্ট: ১০

0
3002

অজানা_অনুভূতি
পার্ট: ১০

#Rabeya Sultana Nipa

 

নীরার ঘটনার পর থেকে প্রাপ্তিকে প্রতিদিন কলেজে যেতে দেয় না।শুধু পরীক্ষা গুলো দিতে দেওয়া হয়।প্রাপ্তি বাসায় নিজেকে খুব একা একাই লাগে।নিজাফাও পড়া লেখা নিয়ে ব্যাস্ত থাকতে হয়।প্রাপ্তি বই পড়তে খুব ভালোবাসে বেশীর ভাগ সময় বই পড়েই কেটে যায় তার।
প্রাপ্তি! প্রাপ্তি! মেজো কাকার ডাকে ভাবনার জগত থেকে ফিরে এলো প্রাপ্তি।শব্দ টা মনে হলো ড্রইং রুম থেকেই আসছে।কাকার কাছে ড্রইং রুমে যেতেই বসো এই খানে।
প্রাপ্তিও কিছু না বলে বসে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।

মেজো কাকা -কি হলো নিচের দিকে না তাকিয়ে আমার দিকে তাকাও।

প্রাপ্তি বাধ্য মেয়ের মতো কাকাইয়ের দিকে তাকালো।

মেজো কাকা -তোমার কি মন খারাপ?

প্রাপ্তি -না।কেন ডেকেছো?

মেজো কাকা-ভাইয়া তো আজ আসতেছে।তুমি আনতে যাবেনা?

প্রাপ্তি -কাকাই আব্বু নতুন করে দেশে আসছে না।আব্বু যখনি আসে তুমি নয়তো ছোটো কাকাই যাও। আজ কেন আমি যাবো?

মেজো কাকা-তুই সাথে গেলে ভাইয়ার হয়তো ভালো লাগতো।

(প্রাপ্তি মনে মনে বলতে লাগলো, কেন নিতে চাইছো আমি কি বুজি না।আমাকে চোখে চোখে রাখার জন্য কতো যে কি বলবা আল্লাই ভালো জানে।)
প্রাপ্তির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে কিরে কি ভাবছিস?

প্রাপ্তি -কিছুই ভাবছি না।আমার ভালো লাগছে না।আমি যাবোনা তোমরাই যাও।।

মেজো কাকা-ঠিক আছে।বাসা থেকে বের হওয়ার দরকার নাই।সাবধানে থাকিস।নীরার মতো এমন কিছু করিস না যাতে সাবার মনে কষ্ট হয়।তবে তোর প্রতি সবার সেই বিশ্বাস আছে তুই এমন কিছু করবি না যাতে এই পরিবারের সবার কষ্ট হয়।আচ্ছ এখন তাহলে আসি।

প্রাপ্তির মা,নীরার মা দাঁড়িয়ে এতোক্ষন কথা গুলো শুনছিলো।নীরাও পাশের রুম থেকে শুনছিলো।কথা গুলো শুনে নীরার একটু ও কষ্ট লাগেনাই।কষ্ট লেগেছে কথায় কথায় নীরার কথা বলে প্রাপ্তিকে বুজানো।
প্রাপ্তি এখনো সেই জাগায় বসে আছে আর ভাবছে সবাই তার প্রতি এতো বিশ্বাস এতো ভরসা। সেই এক নিমেষে ভাঙবে কি করে?
আয়ানের কথা সবাইকে বলবেই বা কি করে? একবার কাকাই মরতে মরতে বেঁচে গেলো।এখন আবার একটা ধাক্কা সামলাতে পারবেনা।কি করবো আমি?

প্রাপ্তির মা মেয়েকে চুপ থাকতে দেখে,
কিরে কিভাবছিস?
প্রাপ্তি,,,,
(এইবার জোরে ডাক দিয়ে)এই প্রাপ্তি কি চিন্তা করছিস তুই এতো মন দিয়ে?

প্রাপ্তি -(চমকে উঠে) এতো চেঁচাচ্ছ কেনো?কি বলবে আস্তে বলতে পারো না?

প্রাপ্তির মা -(অবাক হয়ে)কি হয়েছে তোর এইভাবে কথা বলছিস কেন?

প্রাপ্তি -কিছু হয়নি বলে উঠে রুমে চলে গেলো।

কি করবে সে, এই লোক গুলোকে আবার ঠকানো হচ্ছে।আর সে লোকটাই আমি। কিন্তু আমি তো আয়ানকেও ছাড়তে পারবো না।আমি ছেলেটাকে এতোটাই ভালোবাসি ওকে ছেড়ে যাবো কি করে।কাকে বলবো আয়ানের কথা গুলো।যাকেই বলিনা কেন কেউই আমার কথা শুনবে না।আর আমি বলবোই বা কি করে।কতো বিশ্বাস করে এই মানুষ গুলো আমাকে।প্রাপ্তি কথা গুলো ভাবছে আর কান্না করছে।একটু পর নীরা এসে প্রাপ্তির সামনে বসে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে
নীরা -কান্না করছিস? কষ্ট লাগছে তাইনা?এইবার ভাবে দেখ আমার কতোটা কষ্ট সেই দিন হয়ে ছিলো যেই দিন আব্বু আমায় ৭ দিনের সময় দিয়ে ছিলো।প্রাপ্তি কান্না করে কোনো লাভ নাই। এরা কেউ বুজবেনা।এরা কেউ বুজবেনা তোর এই কান্নার মাঝে কতোটা কষ্ট লুকিয়ে আছে।

প্রাপ্তি -বাধ দে। কষ্ট হবে কেন আমার। আমি ঠিকি আছি।

নীরা -কার কাছথেকে আড়াল করছিস, আমার কাছথেকে?তুই ভালো করেই জানিস তুই কিছু আমাকে বলা লাগেনা আমি বুজি আমার এই বোনটার কি হয় না হয়।আচ্ছা তোকে কিছু বলতে হবে না।এখন চল বাহিরে থেকে ঘুরে আসি।

প্রাপ্তি-আমি যেতে পারবোনা। কাকাই যাওয়ার সময় বলে গেছে আমি যেন কোথাও না যাই।এখন এসে যদি শুনে আমি বাহিরে গেছি তাহলে রেগে যাবে তোর উপর।বলবে তুই আমাকে নিয়ে গেছিস।

নীরা -হুম ঠিক বলেছিস। আচ্ছা প্রাপ্তি! ফারহান কে তোর কেমন লাগে?

প্রাপ্তি -হঠাৎ এইকথা?

নীরা -আমি বলতে চাইছি ফারহান বর হিসেবে কেমন হবে?

প্রাপ্তি -নীরা কি থেকে কি বলছিস নিজে জানিস।ও বিয়ে করার পর ওর বউকে গিয়ে জিজ্ঞাস করিস আপনার বরটা কেমন?আমাকে কেন জিজ্ঞাস করছিস?

নীরা -ঠিক আছে বিয়ের পর না হয় জিজ্ঞাস করবো।একটা কথা বলবো?

প্রাপ্তি -কি বল?

নীরা-কয়েক টা ছবি ছাড়া তুই তো আয়ানকে দেখিস নি তাই না?

প্রাপ্তি -তাতে কি হয়েছে? ভালোবাসা তাতে কমে যায়না।বরং দূরথেকে ভালোবাসা গাঢ় হয়,পবিত্র থাকে।এখন এইগুলো বাধ দিয়ে কি বলতে চাইছিস সেটা বল?

নীরা -না কিছু না এমনি বললাম আরকি।

নীরা কিছু বলতে গিয়েও বললোনা।প্রাপ্তি মন খারাপ হবে ভেবে।
সন্ধ্যায় প্রাপ্তি বাবা বাসায় এসে পৌঁছে গেছে। সবাই অনেক খুশী।

প্রাপ্তির বাবা-এইবার অনেক দিন পরে সবাইকে দেখলান।সবাই অনেক বড় হয়ে গেছে।

মেজো কাকী -ভাইয়া! ১ বছরে কেউ অনেক বড় হয়ে যায় না।

প্রাপ্তির বাবা -কি বলছো হয়নি।এক মেয়ের বিয়ে দেওয়া হয়েছে আরেক মেয়ের বিয়ে দিবো। কিন্তু নীরা কোথায় সবাই এইখানে আছে নীরা নেই কেন?

প্রাপ্তি-আব্বু নীরা মনে হয় লজ্জা পাচ্ছে তাই আসছেনা।

নীরা আসতে আসতে প্রাপ্তি আমি একটু লজ্জা পাচ্ছিনা।আমি বড় আব্বু সামনে আসবো লজ্জা পাওয়ার কি আছে।মৃদুল এসেও সালাম করলো।

প্রাপ্তির বাবা -আজ আমার সত্যি অনেক ভালোলাগছে।সবাইকে একসাথে দেখে।তবে একজন নাই এইখানে।

সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে কথাটা শুনে।প্রাপ্তির মেজো কাকা বললো আমি বুজতে পেরেছি কি বলতে চাইছে।
ইমারান! ফারহান কে ফোন দাও কাল সকালে যেন চলে আসে।

প্রাপ্তি -কাকাই ও আমাদের ফ্যামিলির একজন হলো কিভাবে? আমরা সবাইতো এইখানেই আছি।

মেজো কাকা-এখনো পুরোপুরি ভাবে হয়নি।তবে কিছু দিনের মধ্য হবে।ভাইয়া তুই ফ্রেশ হয়ে আয় আজ অনেক দিন পর সবাই এক সাথে আড্ডা দিবো।
সেজো বউ! নাস্তা রেডি করো ভাইয়াও ফ্রেশ হয়ে আসুক।

প্রাপ্তি নীরা কাছে গিয়ে, কিছুই বুজলাম না আমি ফারহান আমাদের ফ্যামিলির একজন হলো কিভাবে বলতো?

চলবে,,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে